<![CDATA[
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগে ‘অধিকার’ এর মতো কোনো সংগঠন যেন সক্রিয় হয়ে না ওঠে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচনকে পুঁজি করে কেউ যেন গুজব ছড়িয়ে বা ভুল বুঝিয়ে ফায়দা নিতে না পারে, সে ব্যাপারেও গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান তাদের।
২০২৪ সালে হবে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। এরইমধ্যে একটি স্বচ্ছ-অবাধ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার। এ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পর্যবেক্ষকদের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও অধিকারের মতো কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ যেকোনো সময়ে এ ধরণের সংগঠনগুলো মিথ্যা তথ্য কিংবা গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করে কিংবা গুজব ছড়ায় বলে প্রতিষ্ঠিত, তাদের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হওয়া থেকে দূরে রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা: বিশ্ব নেতৃত্বে এক অনবদ্য অনুপ্রেরণা
যেভাবে গুজব ছড়ায় অধিকার:
‘অধিকার’ সংগঠনের সম্পাদক বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খান শুভ্র। তৎকালীন সময়ে ধারণা করা হতো, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে যাবেন। বিএনপিকর্মী থেকেই আদিলুর রহমান মানবাধিকারকর্মীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব নিয়ন্ত্রণকালে নিহতের ভুল তথ্য দিয়ে আলোচনায় আসে অধিকার। আর্থিক অনিয়ম, তথ্য দিয়ে সহযোগিতা না করা ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় সম্প্রতি এনজিও ব্যুরো সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে।
গত বছরের ৫ জুন বেসরকারি সংস্থা অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। তখন এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম তারিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সংগঠনটির কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়, তাই নিবন্ধন নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আদিলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের মতিঝিল সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ ভণ্ডুলের যৌথ অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার।
অথচ পুলিশ জানায়, সেই রাতের অভিযানে কোনো প্রাণহানি হয়নি। পুলিশের তথ্যমতে, অধিকার যে ৬১ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই তালিকা জব্দ করা কম্পিউটার থেকে পাওয়া গেছে। এই তালিকা নিয়ে তদন্তে দেখা গেছে পাঁচজনের নাম দুবার করে এসেছে। চারজন নারায়ণগঞ্জ এবং দুজন চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে পরের দিন গণ্ডগোলে মারা গেছেন। একজন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। নাম আছে ঠিকানা নেই ১১ জনের। নাম এবং ঠিকানা ভুয়া ৭ জনের। ১০ ক্রমিকে কারো নাম উল্লেখ নেই। এ ছাড়া চারজন জীবিত আছেন, তাদের মধ্যে কেউ জেলখানায়, কেউ মাদরাসায়, আবার কেউ চাকরি করছেন।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলে ঢিল: খেলা নাকি নাশকতা
এদিকে, ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর ও পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আদালতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) তাদের বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃতি করা, মতিঝিল অভিযান নিয়ে অসত্য তথ্য উপস্থাপন, ফটোশপের মাধ্যমে ছবি বিকৃত করে অধিকারের প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা এবং জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানোর মতো যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক ছিল।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকতে পারেনি অধিকার। প্রতিষ্ঠানটির এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন না থাকা, রাষ্ট্র ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। কাজেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অধিকারের মতো সংস্থাগুলো যাতে পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকতে না পারে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন বিশ্লেষকেরা।
গুজব ছড়ালে পর্যবেক্ষক থাকতে পারে না:
যারা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে, তাদেরকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হওয়া থেকে বিরত রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি এবং লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শাপলা চত্বরের সহিংসতার পর ২০১৩ সালের নভেম্বরে আমরা একটি শ্বেতপত্র বের করেছিলাম। যাতে আড়াই হাজারের বেশি পাতা ছিল। সেখানে আমরা পূর্ণ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলাম। হেফাজত হাজার হাজার হতাহতের দাবি করেছিল।’
শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘অধিকারের মতো কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করেছিল, তিন শতাধিক আলেমকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু যারা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে, তাদের নাম-ছবিসহ আমরা তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করেছি। তদন্ত করে হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ৩৯ জন ব্যক্তির নাম পেয়েছিলাম। তাদের মধ্যে এমন লোকও আছেন, যারা কোনো দল করেন না।’
আরও পড়ুন: কূটনীতিকদের ‘রাজনীতি’, সৃষ্টি করবে বিভ্রান্তি
শাহরিয়ার কবির বলেন, কেবল অধিকার না, আরও অনেক এনজিও আছে, যারা বিদেশিদের টাকায় চলে। দাতারা যেভাবে পরিসংখ্যান চাইবে, তারা সেভাবে দেবে। তারা জানে দাতারা কী চায়। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা বিভাগ ও সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বেসরকারি সংস্থা অধিকারসহ যেসব সংগঠন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে ও গুজব ছড়ায়, তাদের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক করা উচিত না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক জায়েদুল আহসান বলেন, ‘যেসব সংগঠন বা সংস্থা উদ্দেশ্যমূলক গুজব ছড়ায় বলে প্রতিষ্ঠিত কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করে এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব আছে, নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ বা সংশ্লিষ্ট যে কোনো কাজ থেকে তাদের দূরে রাখাই উচিত হবে।’
এরইমধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পথ উন্মুক্ত করে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ডিসিতে নবম বাংলাদেশ-মার্কিন অংশীদারিত্ব সংলাপ চলাকালে শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে বৃহস্পতিবার (৩ মে) এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে পারস্পরিক স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
]]>