Skip to content

আইএসের নারী জঙ্গি শামীমাকে নাগরিকত্ব দেবে না বাংলাদেশ

বেনার নিউজ:

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জঙ্গি নারী শামীমা বেগম (২৩) বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালালে তাঁকে কারাগারে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

শামীমাকে সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইন অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাবেন না।

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে যুক্তরাজ্যের একটি আদালতে দায়ের করা মামলার রায়ে বুধবার তাঁর নাগরিকত্ব চূড়ান্তভাবে বাতিল ঘোষিত হওয়ার বিষয়ে দুই মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তাঁরা শামীমার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে ২০১৫ সালে স্বেচ্ছায় ব্রিটেন থেকে সিরিয়ায় চলে যান শামীমা।

ব্রিটেনের আদালতের রায়ে বলা হয়, শামীমা বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। কারণ তাঁর বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশে আসলে শামীমাকে বিমানবন্দর থেকেই আটক করে কারাগারে নেয়া হবে। কারণ উনি আইএস-এর মতো ঘৃণ্য সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং উনাকে বাইরে রাখার সুযোগ নেই।”

তিনি বলেন, “ব্রিটিশ আদালত যা-ই বলুক না কেন আমাদের আইন অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাবেন না।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তাঁর বাবা ব্রিটেনের নাগরিক হলেও তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন না।”

তিনি বলেন, “তাঁর বাবা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকলে শামীমা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব চাইতে পারেন। তবে এর মধ্যে শর্ত রয়েছে। উনি একজন সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য এবং তিনি নিজে বিবিসির সাথে সাক্ষাতে স্বীকার করেছেন যে তিনি আইএস গোষ্ঠীতে স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছেন এবং সিরিয়ায় গেছেন। সুতরাং, তাঁকে কেন নাগরিকত্ব দেবে বাংলাদেশ?”

শামীমার বাবা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় অবস্থান করছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রামের বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সিরিয়া-ভিত্তিক আইএস নামক উগ্র জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে ২০১৫ সালে লন্ডনের স্কুল থেকে পালিয়ে দুই সঙ্গীসহ মাত্র ১৫ বছর বয়সে তুরস্ক সীমান্ত হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা।

সেখানে গিয়ে নেদারল্যান্ডস এর এক ধর্মান্তরিত আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেন। এই আইএস যোদ্ধা সিরিয়ায় নিহত হন। তার সঙ্গী অপর দুই মেয়ে সিরিয়াতেই নিহত হন বলে ধারণা করা হয়।

সিরিয়ায় তিনি তিনটি সন্তান জন্ম দেন শামীমা, সবাই অপুষ্টি ও রোগে মারা যায়।

২০১৯ সালে আইএসের পতনের পর থেকে আইএস যোদ্ধা স্বামী ও তিন সন্তান হারিয়ে সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছিলেন ওই নারী।

ব্রিটেনের একজন সাংবাদিক শামীমাকে শরণার্থী শিবিরে খুঁজে পান এবং তাঁর ব্রিটেনে ফিরে আসার ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তবে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করে তাঁকে দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে চিহ্নিত করে।

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে তিনি দেশটির আদালতে আবেদন করেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার আদালত শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে রায় দিয়ে এই আবেদনটি নাকচ করে দেয়।

তিনি এখনও সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন এবং তিনি তাঁর কালো বোরখা বাদ দিয়ে পশ্চিমা পোশাক ব্যবহার করছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁর ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

তবে ব্রিটেনের অনেকেই মনে করেন, শামীমা আসলে তার জঙ্গি চেহারা পরিবর্তনের জন্য অভিনয় করছেন।

অবশ্য বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে শামীমা বলেছেন, তিনি এখন একজন বদলে যাওয়া মানুষ এবং মানুষ তাঁকে যেমন মনে করে প্রকৃতপক্ষে তিনি তেমনটি নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *