Skip to content

আপনার দুঃখ প্রকাশ গ্রহণ করলাম না কাজী সালাউদ্দিন | মুক্তকথা

আপনার দুঃখ প্রকাশ গ্রহণ করলাম না কাজী সালাউদ্দিন | মুক্তকথা

<![CDATA[

খুব ছোটবেলার কথা। টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন চলতো তখন- লাইফবয় সাবানের। বিজ্ঞাপনটি ছিল এমন মাঠে একজন ফুটবলার খেলছেন, বল নিয়ে দৌড়ে যাওয়ার সময় ডি বক্সের সামনে তিনি কাদায় পিছলে পড়ে যান। তারপরও কোনাকুনি শটে বল জালে জড়িয়ে দেন। গোলদাতা ঊর্ধ্বমুখী লাফ দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। ভিডিওটি তখন স্টিল হয়ে যায়। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে জিঙ্গেল বেজে ওঠে- স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে লাইফবয়।

বিজ্ঞাপনটি দেখে তখন খুব বেশি কিছু বুঝতাম না। পরে একটু বড় হওয়ার পর জানলাম- বিজ্ঞাপনের সেই মডেলের নাম কাজী সালাউদ্দিন। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে নামী ফুটবলার। সালাউদ্দিনকে আমি কখনো মাঠে খেলতে দেখিনি। তবে তাকে কেন যেন আমার খুব ভালো লাগতো। খুব পছন্দ করতাম তাকে। বাংলাদেশের এখন ফুটবল খেলোয়াড় সেই সত্তর আশির দশকে গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরের দেশেও ক্লাব ফুটবলে আলো ছড়িয়েছেন- ভেবে তার প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধা অনুভব করতাম।

 

তার প্রতি ভালোলাগার আরো একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিলো- তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ফুটবল নিয়ে লড়াই করা অমিত যোদ্ধাদের একজন তিনি।

 

সময়ের পথ বেয়ে এক সময় তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হলেন। একজন তারকা ফুটবলার দেশের ফুটবলের কর্তা হয়েছেন, ভালো লাগার মতোই বিষয়। সালাউদ্দিন আসার আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের ফুটবলের হর্তাকর্তা ছিলেন অখেলোয়াড় সংগঠকরা। তাই তিনি আসাতে অনেকেই খুশি হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন- ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে!

 

তার সে বক্তব্যকে তখন হেসে উড়িয়ে দেননি কেউই। তার খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্য এবং খেলা ছাড়ার পর ম্যানেজার হিসেবেও ক্লাব পর্যায়ে কিছু সাফল্যের কারণেই অনেকেই ভেবেছিলেন- সালাউদ্দিন যখন বলছেন- হলেও হতে পারে।

কিন্তু হায়, গেল প্রায় ১৫ বছরে এ কী দেখলো বাংলাদেশ। কোথায় কাতার বিশ্বকাপ খেলা। দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশকে এক সময় বলে কয়ে হারাতো বাংলাদেশ, যাদের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি গোল দিতো বাংলাদেশের ফুটবলাররা, সেসব দেশের সঙ্গেও নিয়মিত হারতে থাকলো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। এসব দেশের সঙ্গে কখনো কখনো ড্র করতে পারলে কিংবা সামান্য ব্যবধানে জিততে পারলেই আনন্দে ভেসে যাওয়ার মতো অবস্থা।

 

ফুটবলে সাফল্য এনে দেয়ার স্বপ্ন নিশান উড়িয়ে দায়িত্বে আসা কাজী সালাউদ্দিন কেবল হারের বৃত্ত বাড়িয়েছেন। কোচের পর কোচ বদল করেছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ইচ্ছেমতো উড়িয়েছেন। ফুটবলের উন্নতি কিছুই করতে পারেননি। উল্টো তার সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল র‌্যাঙ্কিয়ের সবচেয়ে নিচে নেমেছে। এই সময়ে ফেডারেশনের অন্যান্য পদে পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এসেছেন আর গেছেন। কিন্তু সভাপতির আসনটি সালাউদ্দিন সাহেব ধরে রেখেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে!

 

হ্যাঁ, তার সময়ে নারী ফুটবলের বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে কিছু সাফল্য এসেছে। কিন্তু তার ব্যর্থতার পাল্লা এতই ভারী- বিশাল সিন্ধুতে একফোটা বিন্দুর মতো তা হারিয়ে যায় সবকিছুর অগোচরে। এতসবের পরেও সালাউদ্দিনের প্রতি কেন জানি এক ধরনের পক্ষপাত অনুভব করতাম। জানি না কেন? অফিসের রিপোর্টার্স মিটিংয়ে অন্যান্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে ফুটবল প্রসঙ্গও আসতো। 

 

আর ফুটবল এলেই সালাউদ্দিন প্রসঙ্গও আসতো অবধারিতভাবেই। সেখানে সালউদ্দিনকে সবাই ধুয়ে দিত। আমি শুধু মিনমিন করে বলতাম- খেলোয়াড়রা মাঠে খেলতে না পারলে কিংবা ফেডারেশনের অন্যান্যরা ঠিকমতো কাজ না করলে একা সালাউদ্দিন কী করবেন?

 

কিন্তু আমার সে ধারণা ভুল ছিল। প্রমাণ পেয়েছি গেল কিছুদিন আগেই। আর এই প্রমাণ পাকাপোক্ত হলো মঙ্গলবার বিকেলে। ফুটবল ফেডারেশনে সালাউদ্দিন সাহেবের সবচেয়ে কাছের লোক, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। দুর্নীতির কারণে ফিফার নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন সম্প্রতি। ফেডারেশনে বসে তিনি এত এত কুকর্ম করে গেছেন। আর সালাউদ্দিন সাহেব নাকি তার বিন্দু বিসর্গও জানতেন না। বিশ্বাস করবে কেউ তার এই দাবি? আচ্ছা সালাউদ্দিন যদি এসব না-ই জানেন, তাহলে ফেডারেশনের সভাপতির চেয়ারে বসে আছেন কেন?

 

সবশেষ মঙ্গলবার এ কি করলেন কাজী সালাউদ্দিন? সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য শুরুর আগে তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপে সাংবাদিকদের নিয়ে তিনি মন্তব্য করলেন- বাফুফেতে ঢুকতে হলে সাংবাদিকদের ছবি জমা দিতে হবে। সাংবাদিকের বাপের জুতা পরা ছবি জমা দিতে হবে। তার সঙ্গে সে সময় ছিলেন- ফুটবল ফেডারেশনের সহ সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। 

 

নাবিল সালাউদিনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন- সাংবাদিকরা অন্তর্বাস পরে আসেন কি না তাও পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

 

একবার চিন্তা করে দেখুন, কেমন রুচির লোকজন বসে আছেন ফুটবল ফেডারেশনে। এই কাজী নাবিল আবার সংসদ সদস্য। আড়ালে আবডালে এরা দেশের মানুষকে কোন চোখে দেখেন তাদের এইসব বক্তব্য কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়?

 

গত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলকালে বাংলাদেশের দর্শকরা আর্জেন্টিনাময় হয়ে গিয়েছিল। কাজী সালাউদ্দিন সাহেব নিজ দেশের খেলায় কিছু উপহার দিতে না পারলেও ওই জনমতকে খোঁচা দিতে কসুর করলেন না। সংবাদমাধ্যমে হৈ চৈ পড়ে যায়-আর্জেন্টিনা দল আসছে বাংলাদেশে। অথচ আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন এই বিষয়ে কিছুই জানে না।

 

মানুষ এটাও ভুলে গিয়েছিল, কিন্তু সর্বশেষ ঘটনা, যা সভ্যতার বরখেলাপ বলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কী বলবেন সালাউদ্দিন সাহেব?

 

এই ঘটনার পর এক ভিডিও বার্তায় সালাউদ্দিন সাহেব দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন। দুঃখিত সালাউদ্দিন, আপনার ক্ষমা প্রার্থনা আমরা গ্রহণ করছি না। কাজী নাবিল আপনি তো ক্ষমাও চাননি, বক্তব্যের দায়ও স্বীকার করেননি। সুতরাং আপনাকে নিয়ে কিছু বলছি না। শুধু বলছি, আপনারা যাই করেন মানুষ কিন্তু সবই দেখছে। দেশের মানুষ সরাসরি কিছু না বললেও ফিফা কিন্তু ঠিকই ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করে না।

জানি নিরীহ গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করার দায়ে আপনাদের কিছুই হবে না। কোনো জবাবদিহির আওতায়ও আপনাদের পড়তে হবে না। তবে দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ক্ষোভটুকু জানিয়ে রাখলাম।

 

লেখক: অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর, সময় টিভি।    
 

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *