<![CDATA[
বিসিএল, বিপিএলের পর এবার দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ উঠেছে। খিলগাঁও ফুটবল একাডেমি ও বিজি প্রেস স্পোর্টস ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচটি পরিকল্পনা করেই পাতানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিক্রমপুর কিংস। তবে এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিল দুদলের কোচ ও ফুটবলাররা। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান মহানগর লিগ কমিটির কো-চেয়ারম্যান ইলিয়াস হোসেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে একাধিক ক্লাবের বিরুদ্ধে পাতানো খেলার অভিযোগ পায় বাফুফে। এরপর তদন্ত ও প্রমাণসাপেক্ষে কারওয়ান বাজার প্রগতি সংঘকে নিষিদ্ধ করে ফেডারেশন। বছর শেষ না হতেই আবার ম্যাচ পাতানোর কলঙ্ক দেশের ফুটবলে।
অভিযোগের তীর এবার দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে খিলগাঁও ফুটবল একাডেমি ও বিজি প্রেস স্পোর্টস ক্লাবের ম্যাচের দিকে। অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালেই হয় এসব ম্যাচ। সংশ্লিষ্ট ছাড়া জনসাধারণের আগ্রহও কম। এই সুযোগটাই নেয় দুই ক্লাব। ম্যাচ শুরুর আগেই সময় সংবাদের কাছে তথ্য আসে পাতানোর।
আরও পড়ুন:বিসিএলে ম্যাচ ফিক্সিং: কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি বাফুফের
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বিজি প্রেস আর খিলগাঁওয়ের খেলাটা পাতানো হবে। বিজি প্রেসের সঙ্গে ড্র করলেই খিলগাঁও বাদ। রেলিগেশনের বিষয়টা এমন। খেলা হবে বুয়েট মাঠে।’
এই তথ্যের সূত্র ধরে রাজধানীর বুয়েট মাঠে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। ম্যাচ চলাকালীন বহিরাগত কয়েকজনকে সন্দেহজনকভাবে ডাগ আউট এবং ম্যাচ কমিশনারের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়, যা লিগের বাইলজে নেই। পরে অবশ্য গণমাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের মাঠ থেকে বের করে দেয়।
ম্যাচের সমীকরণ ছিল খিলগাঁও হারলেই হয়ে যাবে রেলিগেটেড। অন্যদিকে, বিজি প্রেস আগেই সুপার লিগ নিশ্চিত করায় তাদের জন্য ছিল নিয়মরক্ষার।
ম্যাচের প্রথমার্ধ ২-২ গোলে সমতায় থাকলেও বিরতির পর শুরু হয় আসল নাটক। খিলগাঁওয়ের তিন ও চার নম্বর গোলের সময় বিজি প্রেসের গোলরক্ষকের অভিনয়ের চিত্রটা স্পষ্ট উঠে আসে সময় সংবাদের সামনে। যেখানে ৪-২ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয় খিলগাঁও। খেলা শেষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ উঠে আসে প্রতিপক্ষ আরেক ক্লাবের পক্ষ থেকে।
বিক্রমপুর কিংসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাজমুল হাসান খান বলেন, ‘ম্যাচটা অনেকটাই পাতানো ম্যাচের মতো হয়েছে। দুই দল মিলে যে পাতানো ম্যাচ খেলেছে, আমরা তার প্রতিকার চাই।’
তবে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ মানতে নারাজ দুই ক্লাবের কোচ ও ফুটবলাররা। বিজি প্রেসের গোলরক্ষক সালমান রহমান বলেন, ‘বুঝতে পারিনি। আমিও বের হয়েছি আর বলটা বের হয়ে এত দ্রুত চলে গেছে আমি পরে আর ওটা কভার করতে পারিনি। ভুল করেছি গোল খেয়েছি, এখানে ছেড়ে দেওয়ার কী আছে?’
বিজি প্রেসের কোচ দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, ‘এটা (ম্যাচ পাতানো) অসম্ভব। একমাত্র আল্লাহ জানে। একমাত্র আল্লাহ বলতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কিছু হয়নি। একমাত্র কর্মকর্তা ছাড়া আর টিমের সঙ্গে জড়িত লোকজন ছাড়া মাঠে আসা উচিত না।’
খিলগাঁও ফুটবল একাডেমির কোচ হাবিবুর রহমান রিপন বলেন, ‘এটা কোনো অবস্থাতেই পাতানো নয় কারণ আমাদের খেলোয়াড়রা খেলেই জিতেছে। কোনো অবস্থাতেই পাতানো খেলব না, কারণ আমাদের অফিসিয়ালরাও বলছে, আমরা যেভাবে হোক খেলে জয় নিয়ে আসব।’
আরও পড়ুন:জার্সির রং পরিবর্তন করেও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়
মহানগর লিগ কমিটি আপাতত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। লিখিত অভিযোগ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর ফুটবল লিগ কমিটির কো-চেয়ারম্যান ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘লিখিত আকারে যদি কেউ অভিযোগ উত্থাপন করে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, আমাদের কমিটি আছে, সব ধরনের অ্যানালাইসিসের পর যদি দেখা যায় এখানে ম্যাচ পাতানো হয়েছে তবে আমাদের বিধিবিধান অনুযায়ী যে ব্যবস্থার কথা আছে তা নেওয়া হবে।’
ঘরোয়া ফুটবলের এমন পর্যায়ে হরহামেশাই অভিযোগ ওঠে পাতানো ম্যাচের। এবার তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। ফুটবল ফেডারেশন কতটা তৎপর হয়, তাই এখন দেখার বিষয়।
]]>