<![CDATA[
দুই দফায় মোতালেবের পেট থেকে ২৩টি কলম বের করেন চিকিৎসকরা। এখন সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। চিকিৎসকদের জানিয়েছেন আর কখনো কলম খাবেন না তিনি।
প্রথম দফায় ১৫ টি ও ২য় দফায় ৮ টি কলম বের হয় আব্দুল মোতালেবের পেট থেকে। চিকিৎসকরা দুই বার কোনো প্রকার অস্ত্রোপচার ছাড়াই অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে মোট ২৩ টি কলম বের করে তার পেট থেকে। গত ২৫ ও ২৯ মে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তার পেট থেকে অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে কলমগুলো বের করে আনেন চিকিৎসকরা।
সোমবার (১২ জুন) দুপুরে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন মোতালেব। শেষ বেলায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা। এ সময় আব্দুল মোতালেব হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে ওয়াদা করেন আর কখনো তিনি কলম খাবেন না।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি আটার দাগ গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোতালেব। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। মোতালেব ৪-৫ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে এসব কলম আস্ত গিলে খেয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানান।
গত ২৪ মে পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এরপর ২৫ মে কোনো প্রকার অস্ত্রোপচার ছাড়াই অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে মোতালেবের পেটের ভেতর থেকে ১৫টি আস্ত কলম বের করেন চিকিৎসকরা। পরে ২৯ মে ২য় বারের মতো অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে মোতালেবের পেট থেকে আরও ৮টি কলম বের করা হয়। এ অসম্ভবকে সম্ভব করেন সার্জারি বিভাগের একদল চিকিৎসক।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বারের প্রচেষ্টায় অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেট থেকে ২৩টি কলম বের করা হয়েছে। বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও অ্যান্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষতা দ্বারা অপারেশন ছাড়াই একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে কলমগুলো বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। মোতালেব আজ বাড়ি ফিরছে, এটাই আমাদের সফলতা।’
আরও পড়ুন: মোতালেবের পেট থেকে বের হলো আরও ৮ কলম
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘রোগীটি প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিল। পরে মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কী সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে কনসালটেন্ট হিসেবে রোগীটি আমার কাছে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর এতগুলো কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। পরে অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। আসলে বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না। আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল কাজটা। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল, কলমগুলো যেন কোনোভাবেই শ্বাসনালীতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। সেদিন ১৫টি কলম বের করা হলেও আমাদের ধারণা ছিল তার পেটের মধ্যে আরও চারটি কলাম রয়ে গেছে। কিন্তু ২৯ মে সোমবার আমরা কলমগুলো বের করার সময় দেখি চারটি নয়, তার পেটে আরও ৮টি কলম রয়েছে। আমরা সেই ৮টি কলমও বের করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এখন রোগী ভালো আছেন। দীর্ঘ ২০ দিন তাকে হাসপাতালে রাখার পর আজ সোমবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে রিলিজ দেয়া হলো।’
মোতালেবের মা লাইলী বেগম বলেন, ‘এক বছর ধরে আমার ছেলের পেটের ব্যথায় ভুগছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করার পরও সে সুস্থ হয়নি। মাস খানেক আগে সমস্যা আরও বাড়ে। তখন সে খেতে পারত না, খালি বমি করত। এ কারণে তাকে এ হাসপাতালে আনা হয়। এখানে আনার পর তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেট থেকে কলমগুলো বের করে আনেন চিকিৎসকরা। ১২ বছর ধরে আমার ছেলে মানসিক রোগী। তাকে মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও দেখানো হয়েছে। সে কলমগুলো সে না বুঝেই খেয়ে ফেলেছে। আজ আমার ছেলে ভালো হয়ে গেছে আমি অনেক খুশি।’
]]>