<![CDATA[
একসময় বলা হতো কক্সবাজারের পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদী মানুষের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু সেই আশীর্বাদ পরিণত হয়েছে অভিশাপে। প্রতিবছর একাধিক বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়ার মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে। টানা বর্ষণ হলেই নদী উপচে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
গেলো কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বেড়ে যায় মাতামুহুরী নদীর পানি। যা বিপদসীমার কয়েক মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে মাতামুহুরী নদীর পানি উপচে প্লাবিত হয় চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায। রূপ নেয় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়।
পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম, বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যান চলাচল। পানির তোড়ে বছরজুড়ে মেরামত করা সড়ক মুহূর্তেই ভেঙে হয় খান খান। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৫ লাখ মানুষ।
বার বার এমন বন্যা হওয়ার পেছনে মাতামুহুরী নদী শাসন ও নাব্যতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে বন্যা, চার লাখ মানুষ পানিবন্দি
ভুক্তভোগী মুজিবুর রহমান বলেন, চকরিয়ায় ভূমিদস্যু যেমন আছে, তেমনি বালু দস্যুরাও রয়েছে। নদীর নাব্যতা হারিয়ে গেছে। কারণ মাতামুহুরী নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের জন্য নদীর গতিপথ নষ্ট হচ্ছে এবং পানি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চলাচল করতে পারছে না।
মাতামুহুরী নদীপাড়ের বাসিন্দা ছৈয়দ করিম বলেন, বর্ষা মৌসুমে দুয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হলেই বন্যার পানিতে ভাসতে হয়। বন্যা শুধু একবার নয়, বছরে কয়েকবার আসে। যদি নদীর গতিপথগুলো ঠিক করা না হয় তাহলে মাতামুহুরী নদীর গ্রাস থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
আরও পড়ুন: আগস্টে বৃষ্টি ও বন্যা নিয়ে যে পূর্বাভাস দিলো আবহাওয়া অফিস
তাই নদী ড্রেজিং করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়ার প্রতিটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মাতামুহুরী নদী যদি সু-পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করা না হয় তাহলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা বন্যায় ধ্বংস হবে।
আর স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম শুনালেন আশার বাণী। বললেন, মাতামুহুরী নদীকে দু’ভাগে ভাগ করেছি। জাইকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি জরিপ করেছে। ফলে মাতামুহুরী নদী আর অভিশাপ হয়ে থাকবে না। খনন ও তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে চকরিয়া উপজেলার মানুষকে বন্যামুক্ত করা হবে।
বান্দরবানের থানচি সীমান্ত থেকে মাতামুহুরী নদী লামা, আলীকদম, চকরিয়া ও পেকুয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ১৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর জন্ম থেকে এখনো পরিকল্পিতভাবে নদী শাসন বা খনন হয়নি।
]]>