Skip to content

ইউটিউবার নন্দিতার ভারত যাত্রার গল্প | বাংলাদেশ

ইউটিউবার নন্দিতার ভারত যাত্রার গল্প | বাংলাদেশ

<![CDATA[

ভারতের অর্থনীতি, প্রযুক্তি, শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১০০ জন তরুণ প্রতিনিধিকে সুযোগ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন প্রোগ্রাম ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে। এ বছরে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেটদের ভারত সফর আয়োজন হিসেবে অষ্টম। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ১২-১৯ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১০০ তরুণ ভারত সফর করেন। এই ডেলিগেটদের মাঝে সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, চিকিৎসক, শিল্পী ও প্রকৌশলীসহ অন্যরাও অংশগ্রহণ করেন।

সেই ১০০ প্রতিনিধির একজন নেত্রকোনার বিরিশিরির গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে নন্দিতা রিছিল। গারোদের নিজস্ব ভাষায় ইউটিউবে ব্লগ তৈরি করেন রিছিল। সেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিজস্ব নাচ, গান ও তুলে ধরেন গারোদের ভাষায়। গারো সম্প্রদায়ের বাংলাদেশি প্রথম ইউটিউবার যার এক লাখ সাবস্ক্রাইবার পূর্ণ হয়েছে। ভারত সফর নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সময় সংবাদের পাঠকদের জন্য কথাগুলো তুলে ধরা হলো।

নন্দিতা রিছিল বলেন, আমি বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের ১০০ জনের একজন হিসেবে ভারত সফর করেছি। এটা আমার জীবনের অন্যতম অর্জন। কারণ এই সফর ছিল ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে ভারত দেখার সুবর্ণ সুযোগ। যা কিনা বাছাই পর্বের মাধ্যমে ১০০ জনকে দেয়া হয়। আমি এখানে একজন ইউটিউবার হিসেবেই বাছাই হই। যেহেতু আমি ইউটিউবে কাজ করি। এরপর ১২-১৯ অক্টোবর আমিসহ বাকি ৯৯ জন ডেলিগেটস ভারত ভ্রমণ করি।

এই কয় দিনে আমরা ভারতের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করি। এর মধ্যে আগ্রার তাজমহল ছিল অন্যতম, যা দেখার পর এর সৌন্দর্যে আমিসহ বাকিরাও অভিভূত হয়ে যাই। চোখে এখনও এর রেশ যেনো লেগে আছে।

এরপর আমরা আগ্রার রেড ফোর্টে যাই। ঐতিহাসিক এই স্থান ঘুরে দেখি। আগ্রার পর আমরা দিল্লিতে অবস্থিত ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা পরিদর্শনে যাই। যেখানে কিনা বলিউডের অনেক বড় বড় অভিনেতারা গ্রাজুয়েশন করেছেন। সেখানে ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতাও দারুণ ছিল। সেই সঙ্গে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আমাদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। তবে আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি দামি এবং মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা হলো, ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেয়া। আমরা তার কার্যালয়ে যাই এবং দেখা করি। এ ছাড়া ফটোসেশনেও অংশ নিই। উনি আমাদের ডেলিগেটসের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেন, ভালো মন্দ জানতে চান। ওই মুহূর্তটা আমাদের ট্যুরের সবচেয়ে বেশি মনে রাখার মতো ছিল।

আরও পড়ুন: তরুণদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিশ্বে অতুলনীয়: মোস্তাফা জব্বার

নন্দিতা রিছিল বলেন, দিল্লিতে পুরো সময় পুলিশ নিরাপত্তায় আমাদের রাখা হয়েছিল। যেহেতু এটা ভারত সরকারের আমন্ত্রণের একটা সফর ছিল, তাই আমাদের নিরাপত্তা এবং সুযোগ সুবিধার কোনো কমতি ছিল না। দিল্লির পার্ট শেষ করে আমরা যাই বেঙ্গালুরুতে। ওখানে আমাদের প্রথমেই নিয়ে যাওয়া হয় বেঙ্গালুরু রাজ্য প্রধানের কাছে। যেখানে কিছু কথা এবং অনুভূতির বিনিময় হয়। সঙ্গে ফটোসেশনও ছিল।

এরপর আমরা যাই বেঙ্গালুরুরসহ পুরো ভারতের বিখ্যাত একটি আশ্রমে। যার নাম ‘আর্ট অব লিভিং’। সেখানে আমাদের জন্য একটা সেশন রাখা হয়। সেখানের গুরুজি আমাদের ডেলিগেটসদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এই সময়টা আমরা সবাই মানসিক একটা শান্তি অনুভব করেছি। কারণ কিছু সময়ের মধ্যে জীবন সম্পর্কে এত এত ভালো কথা শুনে আমরা মোটিভেট হয়েছি। এটা এই ট্যুরের একটি সুন্দর সময় ছিল। এরপর আমরা বেঙ্গালুরুতে এক রাত থেকে পরের দিন সকালে মাইসরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এই সময়টাতেও আমাদের সঙ্গে পুলিশসহ যাবতীয় নিরাপত্তা গার্ড ছিল।

তিনি বলেন, আমরা মাইসরে গিয়ে সেখানকার বিখ্যাত মাইসর প্যালেস পরিদর্শন করি। যা কিনা প্রায় ২০০ বছর বা তারও আগে বানানো একটা স্থাপত্য। এর সৌন্দর্য ছিল অপূর্ব ও চোখ ধাঁধানো। আমরা তো আমাদের গাইডের কাছে এর কাহিনী শুনছিলাম আর মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। মাইসর প্যালেস ভ্রমণ শেষে আমরা মাইসরের রাবার ডেম আর বৃন্দাবন গার্ডেন দেখতে যাই। সেখানে আমাদের জন্য রাতের বেলা ফাউন্টেন মিউজিকের ব্যবস্থা করা হয়। খুব সুন্দর এবং অসাধারণ ছিল সেই পরিবেশনা। আমরা মাইসরে অবস্থিত, ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় আইটি সেন্টার আইফোসিস ক্যাম্পাসও ঘুরে দেখি। আমার দেখা সুন্দর এবং সবুজ একটি ক্যাম্পাস ছিল এটি। সেইসঙ্গে মাইসর ইউনিভার্সিটিতেও আমাদের নেয়া হয়। যেখানে আমরা জানতে পারি যে, বাংলাদেশি অনেক ছাত্রছাত্রী ওখানে পড়াশোনা করছে। এ ছাড়াও আমরা থ্রি ইডিয়টস খ্যাত সিনেমা যেখানে শুটিং করা হয় সেই বিখ্যাত ভার্সিটির ক্যাম্পাস ঘুরে দেখি। স্মরণীয় এ স্থান ঘুরে দেখে খুব ভালো লাগে।

আরও পড়ুন: সাইবার বুলিংকে গুরুতর সমস্যা মনে করেন ৮৫ ভাগ তরুণ: জরিপ

বেঙ্গালুরুতে দুইদিন বিভিন্ন স্থান দেখে শেষ দুদিন আমরা আবার দিল্লিতে ফিরে আসি। আমাদের ট্যুর প্রায় শেষের দিকে তখন আমরা দিল্লি থেকেই ঢাকায় ফেরত আসব। এ দুদিন আমরা হোটেলে কিছুটা রিলাক্সভাবে কাটাই। কারণ বাকি দিনগুলো আমরা খুবই টাইট শিডিউলে ছিলাম। এর মাঝেই একদিন সকালে আমাদের ঐতিহ্যবাহী দিল্লি গেটে নেয়া হয়।

নন্দিতা রিছিল বলেন, ১৯ তারিখ রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেবার জন্য একটি পাঁচ তারকা হোটেলে গালা নাইটের আয়োজন করা হয়। সেখানে তাদের মিনিস্ট্রির সম্মানিত লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়। দুই দেশেরই নাচ ও গানে গালা নাইট স্মরণীয় হয়ে থাকে। এরপর ফেরার পালা। ২০ তারিখ দিল্লি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা করি।

তিনি আরও বলেন, এই পুরোটা সফরে, নিজের অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারি করেছি। যেহেতু আমি কনটেন্ট ক্রিয়েটর, তাই আমার জন্য এসব ঐতিহাসিক স্থান ও বিভিন্ন সুন্দর জায়গা ঘুরে ঘুরে এর খুঁটিনাটি জানা এবং দেখার পাশাপাশি  ভিডিও তৈরি করার অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল। সামনে এমন সুযোগ এলে আবারও কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। কারণ এতে আমার যেমন দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার সুযোগ থাকে তেমন নিজের কাজের জায়গায় ও ভালো ভালো ভিডিও তৈরির সুযোগ থাকে।

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *