Skip to content

এই অবহেলিত রেলপথটির কান্না শুনবে কে? | বাংলাদেশ

এই অবহেলিত রেলপথটির কান্না শুনবে কে? | বাংলাদেশ

<![CDATA[

রেলপথের ওপরে গড়ে উঠেছে বাড়ি। ভেঙে গেছে একাধিক সেতু। চুরি গেছে যন্ত্রপাতি। স্টেশন বলতে এখন ভাঙা, লতাপাতায় ঠাসা কয়েকটি ইটের দেয়াল। নেই দরজা জানালা। পড়ে আছে টিকিট ঘর, ওয়েটিং রুম ও স্টেশন মাস্টারের ঘরের অবকাঠামো। নেই শুধু মানুষের কোলাহল। পাশ দিয়ে গেলে মনে হয় কান্না করছে রেলস্টেশনটি। কিন্তু তার কান্না শোনার যেন কেউ নেই!

ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ বন্ধ হওয়ার বয়স গড়ালো পঁচিশ বছরে। আর এরইমধ্যে চুরি ও নষ্ট হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। বেদখল হয়ে গেছে শতশত একর সম্পত্তি। বিলোনিয়া স্থলবন্দরকে ঘিরে নতুন অপার সম্ভাবনার পরও রেলপথটি চালুর উদ্যোগ নেই।

 

একটা রেলপথকে কেন্দ্র করে কীভাবে একটা অঞ্চলের শিল্প সাহিত্য জীবন-জীবিকার বিকাশ ঘটে তার প্রমাণ এই রেলপথ। আবার রেলপথ বন্ধ হলে তিলে তিলে গড়ে ওঠা সভ্যতা ও জীবিকা কীভাবে নিঃশেষ হয়ে যায় তারও উদাহরণ এই রেলপথটি।

 

বাংলাদেশের বিলোনিয়া দিয়ে ফেনী থেকে আসামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯২৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে এ রেলপথ চালু করে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি। একই সালে নির্মিত এ রেলপথে বন্ধুয়ার দৌলতপুর, আনন্দপুর, মুন্সির হাটের পীরবক্স, নতুন মুন্সির হাট, ফুলগাজী, চিথলিয়া, পরশুরাম ও বিলোনিয়া নামে আটটি স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল।

 

আরও পড়ুন: কবে হবে বৃত্তাকার রেলপথ

 

প্রথমদিকে এ রেলপথে মালবাহী ট্রেন চলাচল করলেও ১৯৪৭ সালে ভারত-বাংলাদেশ ভাগের পর ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া দুটি লাইন আলাদা হয়ে যায়। ওই পাড়ে ভারতের অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও বাংলাদেশ অংশে পরশুরামের বিলোনিয়া থেকে ফেনী মহকুমা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি ট্রেন চালু করা হয়। ফেনী শহর থেকে পরশুরামের বিলোনিয়া সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথে চলত একটি লোকাল ট্রেন।

বিলোনিয়া রেলস্টেশনের অবকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ। ছবি: সময় সংবাদ

 

এক সময় রেলপথটি ছিল এলাকার শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। লোকসানসহ বিভিন্ন অজুহাতে ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট রেল কর্তৃপক্ষ ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি বন্ধ করে দেয়। কর্মচারীদের বদলি করা হয় বিভিন্ন স্থানে।

 

বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসারে বন্ধ বিলোনিয়া রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই ২০০৮ সালে পণ্য আমাদানি রফতানির মধ্যদিয়ে শুরু হয় স্থলবন্দরের কার্যক্রম। বিলোনিয়া স্থলবন্দর চালু হওয়ার পরপরই সে জনপদের মানুষের চোখে মুখে ফুটে ওঠে অপার সম্ভাবনা।
 

বিলোনিয়ার বাসিন্দা ধন মিয়া সময় সংবাদকে বলেন, প্রতিটি রেল স্টেশনকে ঘিরে একেকটা বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল; যা এখন নিষ্প্রাণ। এপথটিতে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হলে ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন প্রসার ঘটবে। জনজীবন সমৃদ্ধ হবে।

 

আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরের আগেই চালু হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথ

 

ফুলগাজীর টিপু সময় সংবাদকে বলেন, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফেনী-বিলেনিয়া সড়ক পথের ব্যয় দুই তিনগুন বেড়েছে। ট্রেন চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে।

 

বিলোনিয়া স্থলবন্দরের আমদানি রফতানিকারক মো. ইব্রাহিম সময় সংবাদকে বলেন, ট্রেনে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কম। বিলোনিয়া রেলপথ বন্ধ থাকায় এখন পণ্য পরিবহনের জন্য অনেক টাকা গুনতে হচ্ছে।

 

ফেনীর স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ হারুন বলেন, ফেনীর বিলোনিয়া হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল পরিবহন করার উদ্দেশে এ রেলপথ চালুর যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সরকার। ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন পুনঃস্থাপনের জন্য সম্ভাব্য সমীক্ষার কাজ দেয়া হয়েছে ভারতের হায়দরাবাদের আরভে অ্যাসোসিয়েটস আর্কিটেক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টস কোম্পানিকে। কোম্পানিটি ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইনের জন্য দুই লেন পুনঃস্থাপনে প্রাযুক্তিক অর্থনীতির সম্ভাব্য সমীক্ষা শেষে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর পরবর্তী অগ্রগতি সম্পর্কে আমার অজানা।

বিলোনিয়া রেলস্টেশনের কোয়াটারের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: সময় সংবাদ 

 

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিলোনিয়ায় রেললাইন নির্মাণে সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে ভারত। আগরতলা স্টেশন থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে ৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

 

১৮৬২ সালে দর্শনা-জগতি স্টেশনের মধ্যে তদানীন্তন ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি সেবামূলক সংস্থা। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েকে প্রকৃত গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে ঢেলে সাজাতে ও একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে গড়ে তুলতে গত এক দশকে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

 

রেলওয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: রেল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার বলেছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে সাসেক রেল যোগাযোগ বিনিয়োগ কার্যক্রমের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যান হালনাগাদ করার কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যান হালনাগাদ করা হয়েছে, যা সরকার ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি অনুমোদন দিয়েছে। নতুন অনুমোদিত রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যানে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০৪৫ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হলে সমগ্র বাংলাদেশকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সরকার এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে নীতি-কৌশল গ্রহণ করেছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ প্রণীত ম্যাপিং অনুযায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয় চারটি এসডিজি গোলের আওতায় আটটি টার্গেট অর্জনের নিমিত্তে অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করেছে ও সে অনুযায়ী প্রকল্প/কার্যক্রম গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

 

রেলের কত জমি বেদখল: চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৫৮ হাজার ৪৬৯ দশমিক ৯১৪৯ একর বা ২৩ হাজার ৬৭১ দশমিক ৮৩৫ হেক্টর। মোট রেলের জমির মধ্যে লিজ দেওয়া আছে ১৫ হাজার ৮৯ দশমিক ২২১৩ একর বা ছয় হাজার ১০৮ দশমিক ৯৭৪ হেক্টর। আর বেদখল জমির পরিমাণ দুই হাজার ৮১৭ দশমিক ১২৩ একর বা এক হাজার ১৪০ দশমিক ৫৩ হেক্টর।

বিলোনিয়া রেলস্টেশনের পরিত্যক্ত টিকিট কাউন্টার। ছবি: সময় সংবাদ

 

আরও পড়ুন: আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের উদ্বোধন সেপ্টেম্বরে: রেলমন্ত্রী

 

তিনি বলেন, বেদখলকৃত রেলভূমি পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ৯৬ দশমিক ৪৩২ হেক্টর ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এক হাজার ৪৪ দশমিক ১০৩ হেক্টর। নিয়মিত রেলভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বেদখল জমিতে দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বস্তি, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ক্লাব ইত্যাদি রয়েছে।
 

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *