Skip to content

এ মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়ায় ১২ কোটি টাকার লিচু বিক্রির প্রত্যাশা | বাণিজ্য

এ মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়ায় ১২ কোটি টাকার লিচু বিক্রির প্রত্যাশা | বাণিজ্য

<![CDATA[

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচু চাষে এলাকার হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য বদলাচ্ছে। প্রসিদ্ধ এ লিচুর খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এদিতে চলতি মৌসুমে ভালো ফলন হওয়ায় কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবদুস সাত্তার এবার মঙ্গলবাড়িয়ায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা করেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম অবস্থিত। সেখানে গেলেই চোখে পড়বে মন মাতানো লাল টুকটুকে লিচুর সমাহার। পাকা সড়কের দুই ধারে জমির আলে কিংবা বাড়ির উঠানে শত শত লিচু গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ঝুঁকে আছে রসালো পাকা লিচু।

 

এ গ্রামের সফল চাষি মো. সলিম উদ্দিন মাস্টার সংসারের খরচ চালিয়ে সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করছেন। লিচু বিক্রির আয়ে এক ছেলেকে তিনি এমবিবিএস পড়াচ্ছেন। এখন তার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক।

 

সলিম উদ্দিন মাস্টারের মতো এমন সফলতার খোঁজ মেলে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের আনাচে-কানাচে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান পেশা লিচু চাষ। লাল টুকটুকে সুস্বাদু লিচুর রং আর গন্ধে এখন মাতোয়ারা মঙ্গলবাড়িয়া। এখন প্রসিদ্ধ এ লিচুর ভরা মৌসুম চলায় মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে আসছেন লিচু কিনতে।

 

আরও পড়ুন: লেবু চাষে লোকসানে ঝালকাঠির চাষিরা

 

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে লিচু কিনতে আসা গৃহবধূ রাসিমা আক্তার জানান, ‘অনেক দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু কিনব। আজ সুযোগ পেয়ে স্বামীর সঙ্গে লিচু কিনতে এসেছি। এখানকার লিচু সত্যিই সুস্বাদু। আর পরিবেশটাও সুন্দর। তাই ঘুরে দেখছি।’

 

মঙ্গলবাড়িয়ার প্রতিটি গাছে এমন রসালো পাকা লিচু ঝুঁকে আছে। ছবি: সময় সংবাদ

 

কিশোরগঞ্জ শহর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে লিচু কিনতে এসছেন কলেজছাত্র আরাফাত। তিনি জানান, ‘প্রতি বছর আমরা লিচুর মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর স্বাদ ও গন্ধ অন্য রকম। তবে দামটা একটু বেশি।’

 

লিবিয়া প্রবাসীয় রুবেল মিয়া ছুটিতে দেশে এসেছেন। তিনিও এসেছেন মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর স্বাদ নিতে। তিনি বলেন, বিদেশের মাটিতেও এই লিচুর কথা সবাই জানে। আমি দুদিন পরেই চলে যাব। তাই প্রবাসী বন্ধুদের জন্য লিচু নিয়ে যাবে, তার জন্যই এসেছি।

 

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কুসুম ফুল

 

জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে গাছে মুকুল আসার পরই স্থানীয় বেপারিরা আগাম গাছ কিনে নেন। এরপর পরিচর্যা করে গাছের পাকা লিচু বিক্রি করেন তারা। এতে মোটা অঙ্কের লাভের মুখ দেখছেন এলাকাবাসী। বংশপরম্পরায় অনেকেই লিচু আবাদের সঙ্গে জড়িত।

 

এ বিষয়ে লিচুর বেপারি মো. তৌহিদ মিয়া জানান, ৪০ বছর ধরে লিচুর ব্যবসা করছি। এবার প্রায় আড়াইশ’ গাছ কিনেছি। এতে আমার সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলে এবার ১০ লাখ টাকার লিচু বিক্রির আশা করছেন তিনি।

 

 মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বেশির ভাগই গাছের নিচে বিক্রি হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। ছবি: সময় সংবাদ

 

 

এদিকে এরই মধ্যে লিচু বিক্রি শুরুও হয়ে গেছে। বাগান মালিকরা জানান, মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বেশির ভাগই গাছের নিচে বিক্রি হয়ে যায়। দূর-দূরান্তের ক্রেতারা বাগানে এসে লিচু দেখে পছন্দ করার পর গাছ থেকে পেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে প্রতি ১০০ লিচু ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লিচু পুরোপুরি বিক্রি শুরু হবে আরও সপ্তাহখানেক পর।

 

আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ভুট্টা

 

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবদুস সাত্তার বলেন, দিন দিন মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচুর আবাদ বাড়ছে। তাই লিচু চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার লিচু গাছ রয়েছে। এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে।

 

ফলে চলতি মৌসুমে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।

 

মঙ্গলবাড়িয়ার প্রসিদ্ধ লিচু। ছবি: সময় সংবাদ

 

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১০০ বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের হাশিম মুন্সি চীন থেকে একটি লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। এভাবে এ উন্নত লিচুর জাত আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম ও আশপাশে ৮ হাজারেরও বেশি লিচু গাছ রয়েছে।

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *