Skip to content

কংগ্রেসম্যানদের চিঠি সুপরিকল্পিত অপপ্রচার: সম্প্রীতি বাংলাদেশ | বাংলাদেশ

কংগ্রেসম্যানদের চিঠি সুপরিকল্পিত অপপ্রচার: সম্প্রীতি বাংলাদেশ | বাংলাদেশ

<![CDATA[

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, এমন বিষয় উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডন্টে জো বাউডনেকে চিঠি দিয়েছেন ছয় কংগ্রেসম্যান। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও প্রবাসে অবস্থানরত বাঙালিরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

 

এ ধারাবাহিকতায় মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে অসত্য তথ্য উল্লেখ করে সুপরিকল্পিত অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ করেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

 

সংগঠনটির আহবায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

 

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমের সূত্র থেকে জানতে পেরেছি যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে কয়েকজন মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে এবং হিন্দুরা এদেশে ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছে। এ সবই নাকি ঘটছে শেখ হাসিনার শাসনামলে।’

 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ইস্যুতে কংগ্রেসম্যানদের চিঠি, জানে না মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর

 

তবে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর লেখা চিঠি নিয়ে দেশে ও বিদেশে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিয়ে বলা হয়, ‘কংগ্রেসম্যানদের উল্লিখিত চিঠির ভিত্তিতে দেশে এবং বিদেশে চালানো হচ্ছে অপপ্রচার। ত্রিশ লাখ বাঙালির রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের এই নোংরা ষড়যন্ত্রে আমরা মর্মাহত। একই সঙ্গে গভীর দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, জাতির জনক ও তার সুযোগ্য কন্যার মানবিক জীবনাদর্শ ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাই এই অপপ্রচারের উদ্দেশ্য।’

 

সম্প্রীতি বাংলাদেশ বলছে, ‘সংখ্যালঘুদের বিষয়ে শেখ হাসিনা সংবেদনশীল একজন মানুষ।  সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। একই সঙ্গে তার প্রতি সংখ্যালঘুদের আস্থার বিষয়টিও আমরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি। মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেশে-বিদেশে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সম্প্রীতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননার শামিল।’

 

আরও পড়ুন: বাইডেনকে দেয়া ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে কী আছে?

 

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর দেশব্যাপী পরিচালিত নির্যাতন ও বর্বরতার কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গিয়ে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর রাষ্ট্রিয় মদতে যে নৃশংস বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল, তা একাত্তরের ইতিহাসকেও হার মানায়। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান এবং নিজামী-মুজাহিদদের শাসনামলের ভয়াবহ ঘটনাবলীকে বর্তমান সময়কালের উল্লেখ করে ধূর্ততা ও চাতুর্যের সঙ্গে প্রচার করার অপচেষ্টা চলছে।’

 

সম্প্রীতি বাংলাদেশ সব ধর্মের শুভবাদী মানুষকে সম্মিলিতভাবে এমন গুজব প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন।

 

যা বলছে অন্য সংগঠনগুলো
কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে মিথ্যা এবং বাস্তবতাবিবর্জিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সেকুলার সিটিজেন, বাংলাদেশ। কংগ্রেসম্যানদের মিথ্যা তথ্যের চিঠিতে আতঙ্কিত ও হতবাক হওয়ার কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। 

 

আরও পড়ুন: ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি প্রত্যাহারের দাবি ১৯২ মার্কিন বাংলাদেশির

 

এতে সংগঠনটির বাংলাদেশের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে গত ১৭ মে লেখা এক চিঠিতে দেশটির ছয় কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ আতঙ্কিত ও হতবাক হয়েছি।’

 

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে সেকুলার সিটিজেনের বাংলাদেশের সদস্যরা দাবি করেছেন, মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের উল্লিখিত চিঠিটি পক্ষপাতদুষ্ট। সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে ইতিহাস বিকৃত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে।

 

এরআগে, জো বাইডেনকে দেয়া ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠিকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে অভিযোগটি সত্য নয়, দাবি করেন তিনি।

 

সংখ্যালঘুদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসা নিয়ে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি পুরোদস্তুর মিথ্যা কথা। বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছি।’

 

আরও পড়ুন: কংগ্রেসম্যানদের চিঠি: অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর অপকৌশল

 

এছাড়া কংগ্রেসম্যানের চিঠি প্রত্যাখ্যান করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১৯২ মার্কিন নাগরিক। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে এ নিয়ে একটি পাল্টা আবেদনও পাঠিয়েছেন।

 

১৯২ মার্কিন বাংলাদেশির দাবি, ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের সংখ্যালঘু নির্যাতন, জঙ্গিবাদ ও অপরাধমূলক কোনো তথ্য না থাকায় তা পক্ষপাতদুষ্ট এবং গ্রহণযোগ্য নয়। 

 

এ চিঠিতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর সংখ্যা কমে আসার তথ্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, অতিরঞ্জন ও একপেশে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন দেশটিতে বসবাসকারী ১৯২ মার্কিন বাংলাদেশি। তারা বলেছেন, লবিস্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইতিহাস বিকৃত করে পরিসংখ্যানবিহীন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন ওই কংগ্রেসম্যানরা।

 

সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে কংগ্রেসম্যানদের চিঠিটি সরকারকে চাপে রাখার কৌশল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, চিঠিতে দেয়া তথ্য যেমন সত্য না, তেমনই সেটির ভাষাও কূটনৈতিক শিষ্টাচারসুলভ না। এতে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে ও চিঠির ভাষাও খুবই দুর্বল।

 

বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে অর্থের বিনিময়ে এ চিঠি দেয়া হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, এমন ঘটনা নতুন না, বরং অনেক আগে থেকেই তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

 

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, যে ছয় কংগ্রেসম্যান এ চিঠি লিখেছেন, তারা এর আগে কখনও বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বলেননি। লবিস্ট নিয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে এ চিঠি লেখানো হয়েছে। এমনকি ছয় কংগ্রেসম্যানের মধ্য থেকে মাত্র একজন বব গুড এ চিঠি তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপ করেছেন। অর্থাৎ চিঠিটিকে তারা নিজেরাও গুরুত্বসহকারে নেননি।

 

আরও পড়ুন: ছয় কংগ্রেসম্যানের মিথ্যা চিঠিতে হতবাক সেকুলার সিটিজেন বাংলাদেশ

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ধরেই নিতে পারি, এই চিঠি বাংলাদেশের বিরোধী দলের লোকজন কংগ্রেসম্যানদের লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের বুঝিয়েছে, তাদের দিয়ে চিঠি দিয়েছে।

 

এতে বলা হয়েছে, আমেরিকা যাতে জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে শান্তিরক্ষী মিশনে না নেয়। এতে বোঝা যায়, মানুষের মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি করতে, সরকারি দলের ওপর চাপ তৈরি করতে এগুলো করা হচ্ছে।

 

গবেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, কংগ্রেসম্যানরা হলেন মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। সিনেট হচ্ছে উচ্চকক্ষ। তাদেরকে পয়সা দিয়ে যেকোনো কথা বলিয়ে নেয়া যায়। তারা সবসময় যে ন্যায়ের পক্ষে কথা বলবেন, তা কিন্তু না।

 

‘সিনেটররা যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাদের যে ভাষা তাও কূটনৈতিক শিষ্টাচারসুলভ না। চিঠিতে এমন কিছু শব্দ ও বাক্য আছে, যা অন্য দেশের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না—অনুচিত। কূটনৈতিক ভাষা, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে দরখাস্তের ক্ষেত্রে আমরা যা করি, সেগুলোতেও কিন্তু এটা হয় না,’ যোগ করেন তিনি।

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *