Skip to content

‘কবরে অক্ষত লাশ’ কি জান্নাতি হওয়ার আলামত? | ধর্ম

‘কবরে অক্ষত লাশ’ কি জান্নাতি হওয়ার আলামত? | ধর্ম

<![CDATA[

কোথাও মাটি কাটতে গিয়ে বা নদীভাঙনে অক্ষত লাশ পাওয়ার কথা প্রায়ই শোনা যায়। এ অবস্থায় আমরা কি এমন চিন্তা করতে পারি যে, লোকটি মুত্তাকি কিংবা পরহেজগার ছিলেন বা জান্নাতির আলামত হিসেবেই তার লাশ আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ সময় পরও অক্ষত রেখেছেন? এর উত্তর হলো, কারো লাশ অক্ষত থাকা মানেই জান্নাতি কিংবা অক্ষত না থাকলে জাহান্নামির লক্ষণ—এমন কথা কোরআন-হাদিসে নেই।

তবে এ কথা সত্য যে, আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাকে কোনো অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে সম্মানিত করতে পারেন। সেটি হতে পারে যুগের পর যুগ লাশ অক্ষত রাখার মাধ্যমেও।

অতএব হতে পারে যে এটি একটি কেরামত কিংবা আল্লাহর কুদরতের একটি অংশ। অতএব, যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় ঈমান ও নেক আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তার লাশ যদি দীর্ঘদিন পরও আমরা অক্ষত দেখতে পাই, সে ক্ষেত্রে তার প্রতি আমরা সুধারণা করতে পারি।

আরও পড়ুন: কাজের সময় রেকর্ড করা কোরআন তেলাওয়াত শোনা কি গুনাহ?

ইমাম আবু জাফর তাহাবি ইমাম আবু হানিফা, মুহাম্মদ, আবু ইউসুফ (রহ.) ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা বর্ণনা করে বলেন, ‘সকল মুমিন করুণাময় আল্লাহর ওলি। তাদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কোরআনের অনুসরণকারী সে ততবেশি আল্লাহর কাছে কেরামত-প্রাপ্ত (ততবেশি সম্মানিত)।’ (আল-আকিদাহ (শারহসহ), পৃষ্ঠা: ৩৫৭-৩৬২)

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, অতি আবেগী হয়ে তাকে যেন জান্নাতি সার্টিফিকেট আমরা না দিই। কেননা, নবীজি (স.) যাদের জান্নাতি বলেছেন, তাদের ছাড়া অন্য কাউকে জান্নাতি বলার অধিকার ইসলাম আমাদের দেয়নি। অতএব, কারো প্রতি সুধারণা পোষণ করতে গিয়ে সীমা লঙ্ঘন যেন না করি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার, কারো লাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলে বা পচে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে তিনি বদকার ছিলেন কিংবা তার অবস্থান জাহান্নামে হবে। এসব কথা কোরআন-হাদিসে নেই। সুতরাং এ ধরনের ইস্যুতে আমাদের সতর্ক হতে হবে।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ‘আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম’ গ্রন্থে কাউকে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন: ‘এ ক্ষেত্রে ওহির ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হবে। কোরআন বা হাদিসে যাদের জান্নাতি বা জাহান্নামি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের নিশ্চিতরূপে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলতে হবে। অন্য কারো বিষয়ে নিশ্চিতরূপে বলা যাবে না যে, লোকটি জান্নাতি বা জাহান্নামি..। মুমিনদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত প্রদান থেকে বিরত থাকি, তাদের আমরা জাহান্নামি বলেও সাক্ষ্য দিই না এবং জান্নাতি বলেও সাক্ষ্য দিই না। কিন্তু আমরা তাদের বিষয়ে আশা পোষণ করি ও আশঙ্কাও করি..।’ (আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম, পৃষ্ঠা: ২৭-২৯)

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ ধরনের ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আমরা দেখতে পাই। সেগুলো যেহেতু কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, সেই ব্যাখ্যাও আমরা গ্রহণ করতে পারি।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, অনেকে এডিটেড ছবি বা ফেক ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এর মাধ্যমে তারা হয়তো মনে করে যে এতে মানুষের ঈমান বাড়বে। না, এটি সঠিক চিন্তা নয়। এটি ইসলাম প্রচারের পদ্ধতিও নয়। বরং এতে মিথ্যার প্রচার হয় বা গুজব ছড়ানো হয়, যা কবিরা গুনাহ। মিথ্যার প্রচার, প্রপাগান্ডা কিংবা যাচাই-বাছাই না করেই কোনো খবর প্রচার করার অনুমতি ইসলামে নেই। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ থেকে সতর্ক হওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন: সকালে যে আমল করলে সারাদিন ভালো কাটবে

মহান আল্লাহ বলেন, ‘(অনুমানভিত্তিক) মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক।’ (সুরা জারিয়াত: ১০)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (যাচাই না করে) তাই বলে বেড়ায়’। (সহিহ মুসলিম: ৫)

মোটকথা, কোনো মুসলমানের লাশ যদি আমরা অক্ষত দেখতে পাই, তার ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করব আবার শরিয়তের গ্রহণযোগ্য কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলে সেটাও গ্রহণ করতে পারি। এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। একইভাবে কবরে কারো হাড়গোড় পাওয়া গেলে তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা যাবে না।

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *