Skip to content

খাদ্য সহায়তা না কমানোর দাবি রোহিঙ্গাদের

বেনার নিউজ:

খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে উখিয়ার লম্বাশিয়া এক নম্বর শিবিরে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হাতে প্রাণ হারান রোহিঙ্গাদের নেতা মুহিব উল্লাহ। তাঁর নিহত হওয়ার স্থানে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা জানান, দুই থেকে তিন হাজার শরণার্থী এতে অংশ নেন।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নূর কামাল বেনারকে বলেন, অল্প সময়ের ঘোষণায় সমাবেশে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা নুর হোসাইন নিজস্ব ভাষায় গান পরিবেশন করে দ্রুত তাঁদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর ২টার পর থেকে রোহিঙ্গারা সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেন। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের রোহিঙ্গারা নানা দাবি ও স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন হাতে সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশের ব্যানারগুলো লেখা ছিল বার্মিজ ভাষায়।

রোহিঙ্গা নেতা মাওলানা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, “আমরা এসেছি প্রায় ছয় বছর হয়েছে। ডব্লিউএফপি (বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি) থেকে সহযোগিতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা এটা গ্রহণ করতে পারব না। কেননা তারা খরচ করছে, এসি গাড়িতে বিলাসিতা করছে। তাদের সেই বিলাসী জীবনের খরচ কমিয়ে আমাদের (রোহিঙ্গাদের) দিতে হবে। আমাদের জীবন বাঁচতে হলে আগের মতো রেশন দিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “নিজ ঘরে (মিয়ানমারে) ফিরে যেতে সবাই মিলে প্রস্তুত থাকতে হবে। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে আমরণ অনশনের ডাকে সাড়া দিতে সবাইকে প্রস্তুত থাকবে হবে।”

মাস্টার মো. কামাল বলেন, “শরণার্থী জীবন খুবই কষ্টের। তাই আমরা মিয়ানমারে ফিরতে চাই। কারণ মিয়ানমার আমাদের দেশ, সে দেশে ফিরে যেতে চাই। আমাদের মাতৃভূমিতে গিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করতে চাই। মিয়ানমার এত সহজে রাজি হবে না। বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।”

“প্রয়োজনে রোহিঙ্গা স্বীকৃতি নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সবাইকে নিয়ে আমরণ অনশনের ডাক দেবো,” বলেন তিনি।

বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান কামাল। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মানতে রোহিঙ্গাদের প্রতি অনুরোধ জানান এই রোহিঙ্গা নেতা।

ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, “ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গারা অনুষ্ঠান শেষ করেছেন। মূলত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাঁরা একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। সেখানে রেশন কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদসহ মিয়ানমারের ফিরে যাওয়ার দাবি তুলেছেন তারা।”

সমাবেশে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই জন্য পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিল বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে পত্র মারফত জানিয়েছে যে, তারা রোহিঙ্গাদের রেশন বরাদ্দ ১২ ডলারের পরিবর্তে ১০ ডলার নামিয়ে আনছে।”

“আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ না কমাতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছি। গতকাল জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং আমার মনে হয়, এই বিষয় নিয়ে সেখানেও আলোচনায় হয়েছে,” বলেন তিনি।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, “জাতিসংঘ বরাদ্দ কমিয়েছে তহবিল সংকটের কারণে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন তাঁদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক অনুদান প্রদান অব্যাহত রাখেন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমটি সঠিকভাবে পরিচালনায় অবদান রাখেন।”

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলেছে, মার্চ মাসে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য রেশন ১৭ শতাংশ কমিয়ে দেবে। এতে প্রতি ব্যক্তির মাসিক খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ বর্তমানে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলারে নেমে আসবে। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, এপ্রিলের মধ্যে যদি নতুন অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি না পায়, তাহলে এই বরাদ্দ আরো বেশি কাটছাঁট করতে হবে।

আরো যাতে কাটছাঁটের মতো পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য ১২৫ মিলিয়ন ডলার তহবিলের আবেদন করেছে জাতিসংঘের এ সংস্থাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *