Skip to content

ছেলের দুর্নীতিতে ফেঁসে যেতে পারেন জো বাইডেন | আন্তর্জাতিক

ছেলের দুর্নীতিতে ফেঁসে যেতে পারেন জো বাইডেন | আন্তর্জাতিক

<![CDATA[

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিতীয় ছেলে হান্টার বাইডেন ‘বিউটিফুল থিংস’ নামে স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন ২০২১ সালে। বইটির শুরুতেই তিনি লিখেন যে, ‘আমি এরিক ট্রাম্প বা ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র নই। আমি নিজের বাবার নামের ফায়দা না উঠিয়ে অন্যদের হয়ে কাজ করেছি এবং আমার উত্থানপতন একান্তই আমার।’

‘বিউটিফুল থিংসে’র পরবর্তী ২২০ পৃষ্ঠাজুড়ে হান্টার বাইডেন তার শৈশব, ২০১৫ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে মারা যাওয়া ভাই বিউ বাইডেনের প্রতি ভালোবাসা, তার ব্যবসায় এবং কোকেন ও মদের প্রতি তার নেশা ইত্যাদি বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। এত কিছু বলার পরও যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, হান্টার বাইডেন তার বাবার প্রভাব থেকে আসলে কতটা স্বাধীন। হান্টার স্বীকার করেছেন, প্রেসিডেন্টের (ভাইস প্রেসিডেন্টসহ) ছেলে হওয়ার কারণে হয়তো কিছুটা ফায়দা তিনি পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও আসলে তিনি যা করেছেন, তা নিজের চেষ্টায় করেছেন। তার ব্যর্থতা বা আসক্তির মতো ব্যাপারও তার একান্তই নিজের। এখানে তার বাবার কিছু করার নেই আসলে।  

 

কিন্তু বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটদের বিরোধী রিপাবলিকানরা দেখাতে চায় এর বিপরীত কিছু। যেমন চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের বিদেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান জেমস কোমার হান্টার বাইডেনের নথিপত্রে ব্যাপক তদন্ত চালান। তার আশা ছিল, তিনি হয়তো এমন কিছু খুঁজে পাবেন। কিন্তু তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। জেমস কোমার ১০ মে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেন যে, বাইডেন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হান্টার বাইডেন, জো বাইডেনের ভাই জেমস বাইডেন, হান্টার বাইডেনের সাবেক স্ত্রী এবং বিউ বাইডেনের স্ত্রীও বিদেশি উৎস থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এসব অর্থ নেয়া হয়।

 

কমিটি এর মধ্যে বেআইনি কোনো লেনদেন দেখতে পায়নি এবং এসব লেনদেনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো অংশগ্রহণ দেখতে পায়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সমস্যার শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, হান্টার বাইডেনের বিষয়ে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।  

 

আরও পড়ুন: বাইডেন পরিবারের ৯ সদস্যের হাতে বিদেশি উৎসের টাকা

 

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে যেতে পারে। যেমন চীনা ধনকুবের ইয়ে জিয়ানমিংয়ের কাছ থেকে হান্টার বাইডেন এবং তার চাচা জেমস বাইডেন বেশ কয়েক মিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কী কারণে তারা সেই অর্থ গ্রহণ করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হয়, সে সময় ইয়ে জিয়ানমিং হয়তো তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টকে (জো বাইডেন) তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে কোনো বিষয়ে প্রভাবিত করতে চাইছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে ইয়ে জিয়ানমিংকে চীনা কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করে। তারপর থেকেই জিয়ানমিংয়ের আর কোনো খোঁজ নেই।

 

জিয়ানমিং ছাড়াও ইউক্রেনীয় গ্যাস কোম্পানি বুরিজমাতেও কাজ নিয়েছিলেন হান্টার বাইডেন। তবে তার কাজ কী ছিল সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। তবে নিজের বইতে হান্টার বুরিজমার কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে লিখেছেন, আমি কাজটি নিয়েছিলাম কারণ সেখানে খুব বেশি কিছু করার ছিল না। তারা আমার ভাইয়ের দেখাশোনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং সময় আমাকে দিয়েছিল।’

 

এতকিছু সামনে থাকার পরও জেমস কোমারের কমিটি এমন কিছু বের করতে পারেনি যা থেকে প্রমাণিত হতে পারে যে, জো বাইডেন কোনোভাবে এসব থেকে সরাসরি উপকৃত হয়েছেন। এমনকি হান্টার বাইডেনের চুরি হয়ে যাওয়া হার্ড ড্রাইভ, ল্যাপটপ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া ভয়েস মেইলের তথ্য থেকেও এমন কিছু পাওয়া যায়নি যা জো বাইডেনের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

 

তবে প্রেসিডেন্টের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের তদন্ত। তদন্তটি ২০২০ সালে প্রকাশ্যে আসে। চলতি বছর এপ্রিলের শেষ দিকে হান্টার বাইডেনের আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে আনা হতে পারে এমন চারটি সম্ভাব্য ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছিলেন বলে জানা গেছে। গত ২৩ মে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবার একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিবিএস নিউজকে জানান, বিচার বিভাগ হান্টারের অর্থের বিষয়ে যে তদন্ত পরিচালনা করছিল তা ‘ধীর গতিতে’ এগিয়ে নিচ্ছে।

 

আরও পড়ুন: বাইডেন পরিবারের সবাই অপরাধী: ট্রাম্প

 

সম্ভাব্য অভিযোগগুলোর মধ্যে তিনটি হলো হান্টার বাইডেনের করের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং চতুর্থটি ২০১৮ সালে একটি বন্দুক কেনার সঙ্গে সম্পর্কিত। বন্দুক কেনার সময় হান্টার বাইডেন তার ব্যাপক অবৈধ মাদক গ্রহণের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছিলেন। তবে হান্টার এমন কোনো অন্যায়ের কথা অস্বীকার করেছেন। মে মাসের শুরুতে এনবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন তার ছেলের নেশাগ্রস্ত হওয়া এবং মাদক গ্রহণের বিষয়টি জেনেও তা সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার ছেলে কোনো ভুল করেনি।’ ফলে হান্টার বাইডেন যদি সত্যিই এই অভিযোগে ফেঁসে যান তা বাইডেনের জন্য সত্যিই হাতাশজনক হবে।  

 

পরিহাসের বিষয় হলো, রিপাবলিকান শিবিরের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পরিবারের সদস্যরাও নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। বরং তাদের অবৈধ আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ হান্টার বাইডেন এবং বাইডেন পরিবারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নেয়া অর্থের চেয়ে অনেক বেশি। যেমন, গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার তার হেজ ফান্ডে সৌদি যুবরাজের কাছ থেকে খুব সহজ শর্তে ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ লাভ করেন। এমনকি ট্রাম্প নিজেই একাধিক ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে রয়েছেন। এরমধ্যে সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেয়া হাশ মানির বিষয়টি অন্যতম।

 

তারপরও ডোনাল্ড ট্রাম্প হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারেন। তিনি এরই মধ্যে গত মার্চে এক সভায় বলেছিলেন, ‘হান্টার বাইডেন একজন অপরাধী এবং তার কিছুই হয়নি। জো বাইডেনও অপরাধী এবং তার যে কিছু হবে সেটাও ভাবা যায় না ‘তবে ট্রাম্প তাদের অপরাধী বললেও তাদের অপরাধ কী সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে যাই হোক, হান্টার বাইডেনই হন আর ট্রাম্পের কোনো সন্তানই হন, প্রভাবশালী বাবার নাম ব্যবহার করে অর্থ হাসিলের কিছু না কিছু মূল্য তো পরিশোধ করতেই হবে।   

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *