<![CDATA[
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। এরপর এইচ এম এরশাদ তাকে অনুসরণ করেন এবং খালেদা জিয়া তার দেবর এরশাদকে অনুসরণ করেন। আর আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের হাতে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ জুলাই) একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনের (২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশে সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং তার শাসনামলে অনুষ্ঠিত সংসদ উপ-নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং এটি চালিয়ে যাব। বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরের সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্নও তুলতে পারেনি।’ অতীতে বাংলাদেশে এতো শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে কিনা প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদের বিভিন্ন উপনির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করেছি, তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছি এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারা নিরবচ্ছিন্ন রেখেছি।’
বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও অন্যান্য অপকর্ম চালিয়ে তারা (বিএনপি) দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকাকে ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, আবার নৌকায় ভোট দেয়ায় মঙ্গা (দুর্ভিক্ষ) দূর হয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। দেশের জনগণ বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, এর সুফল তারা পাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে সামরিক শাসকরা: প্রধানমন্ত্রী
‘আজ, আমরা দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না থাকলে এটি আরও কমানো যেত। মহামারি ও যুদ্ধের পরও সরকার জনগণকে খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে।’
২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট দেশ। যেখানে থাকবে স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজের পাশাপাশি স্মার্ট-দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে অতীতে কীভাবে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল তা বিশদভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। এরপর এইচ এম এরশাদ তাকে অনুসরণ করেন এবং খালেদা জিয়া তার দেবর এরশাদকে অনুসরণ করেন।’
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০০১ সালে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি শাসনামলের দুঃশাসন, সহিংসতা ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের নির্যাতনকে কেবল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দমন-পীড়নের সঙ্গে তুলনা করা যায়।’
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় সংসদ ভবনকে গোছানো সম্ভব হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন (৩০০ টির মধ্যে) পেয়েছিল, যা থেকে স্পষ্টভাবে বিএনপির অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমান হতে পারে না। কারণ, ১৯৪৯ সালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অন্যদিকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেনানিবাস থেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। সুতরাং তাদের (বিএনপি) আদর্শ ও নীতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মেলে না।’
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা প্রশ্ন তোলে তাদের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের আগে নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা উচিত।’
এখন অনেকে বাংলাদেশে ‘মানবাধিকারের খোঁজে’ আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, ২০০১–এর নির্বাচনে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ হয়েছিল, তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল? তারা কেন চুপ ছিল? তাদের মুখে কেন কথা ছিল না? দেশি-বিদেশি আমি সকলের বেলায় বলব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে আছেন আমাদের সবক দেন। মানবাধিকার শেখান। মানবাধিকারবঞ্চিত তো আমরা। যারা খুনিদের ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দিয়ে রক্ষা করে, আজ তাদের কথা শুনে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, অনেক দেশ দেখি মানবাধিকারের কথা ওঠায়। আমরাই তো মানবাধিকারবঞ্চিত ছিলাম। ৩৫ বছর লেগেছে মা–বাবার হত্যার বিচার করতে।’
বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই যারা বলেন, তারা কি ২০০১ সাল দেখেননি, ১৫ আগস্ট দেখেননি— এমন প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আসা পর্যন্ত এ দেশে কী ছিল, তা দেখেননি? তখন তারা কী কারণে চোখেও দেখেননি, কানেও শুনেননি— তা বোধগম্য নয়।’
আরও পড়ুন: দেশের প্রতিটি বাহিনীই সাধারণ মানুষের পাশে আছে: প্রধানমন্ত্রী
‘আওয়ামী লীগ সরকার নির্যাতিত ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। মানবিক কারণেই সরকার এতো মানুষের দায়িত্ব নিয়েছে। এর চেয়ে মানবাধিকার রক্ষার বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? এটা আমার প্রশ্ন’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যখন অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দেয় তখন তারা কেন মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে? তারা এটা কিভাবে বলতে পারে?’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নিয়মিত বন্দুকের গুলিতে স্কুলে, শপিং মল এবং রাস্তায় মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের নিজেদের দেশের মানবাধিকার আগে রক্ষা করা উচিত।’
গত ৩১ মে শুরু হওয়া অধিবেশন, ২২ কার্য দিবস শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতির সমাপ্তির আদেশ পাঠ করেন।
]]>