Skip to content

তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে বোর্ড গঠনের উদ্যোগ

বেনার নিউজ:

গত কয়েক মাস ধরে চলা দাবির মুখে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে গত ২৬ জানুয়ারি শিল্প মালিক সংগঠন ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নামের তালিকা চেয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শ্রম অধিদপ্তর। চিঠির একটি কপি বেনার পেয়েছে।

কারখানা মালিক এবং শ্রমিক নেতাদের একটি অংশ মনে করছেন, নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও শ্রম আইনে প্রতি পাঁচ বছর পর পর মজুরি বোর্ড গঠনের বিধান রয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয় আশা করছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করা সম্ভব হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বুধবার বেনারকে বলেন, “আমরা মজুরি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের (আইনগত প্রক্রিয়ায় যাচাই) জন্য ইতোমধ্যে পাঠিয়েছি। আশা করছি আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে ফাইল চলে আসবে। এরপর মজুরি বোর্ড গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বোর্ড হতে পারে বলে আশা করা যায়।”

বোর্ড গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে মজুরি নির্ধারণ করা যায়, উভয়পক্ষ একমত হলে তা তিন মাসেও হতে পারে বলে জানান তিনি।

মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২২ সালের শুরু থেকে মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন শ্রমিকরা। গত বছরের জুনে এসে তাঁদের দাবি নিয়ে ঢাকার মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসেন। পরবর্তীতে একই দাবিতে গত কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ, শ্রম মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে আসছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে কারখানা মালিক এবং শ্রমিকদের একটি অংশ মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে মজুরি বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান মনে করেন, নির্বাচনের আগে যাতে কোনো শ্রম অসন্তোষ না হয়, সে জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ যাতে না হয় সে জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি হিসেবে বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু বেনারকে বলেন, “মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ যৌক্তিক।”

মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ ইতিবাচক

তৈরি পোশাক বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত। সরকারি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশ এসেছে এ খাত থেকে। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।

দেশে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের মতো পোশাক খাতের শ্রমিকদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত এক বছর থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের আগস্টে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে আসে, যা ছিল বিগত ১১ বছরে সর্বোচ্চ।

“দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, বাসা ভাড়াসহ শ্রমিকদের সব খরচই বেড়েছে। এ জন্য শ্রমিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যয় কঠিন হয়ে পড়েছে, যা তাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ ইতিবাচক,” বেনারকে বলেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বেনারকে জানান, “আমরা মন্ত্রণালয় থেকে মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য চিঠি পেয়েছি এবং নাম ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

পোশাক খাতের দুই সংগঠন চিঠি পেলেও এখনো নামের তালিকা পাঠায়নি বলে জানা গেছে।

কারখানা মালিকদের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বেনারকে বলেন, “বর্তমান মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় শ্রমিকদের এ মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ যৌক্তিক। যদিও আমাদের খরচ বাড়ছে, তবুও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি বাড়লে তা আমরা বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে নিতে পারব বলে আশা করি।”

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বেনারকে বলেন, “গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিসহ সার্বিক কারণে উৎপাদন খরচ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আবার বেশির ভাগ কারখানায় ক্রয়াদেশও নেই। লোকসান দিয়ে ২০৭টি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে বেতন দিতে পারে না। নতুন মজুরির চাপ এলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”

বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয় ৬৩০ টাকা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করা হয় (বর্তমান হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৮০ ডলার)। এর আগে ২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা।

বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর মজুরি পর্যালোচনার লক্ষ্যে নতুন মজুরি বোর্ড করার কথা রয়েছে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে তিন বছরের পর যে কোনো সময় তা করা যায়।

বর্তমান বাজারমূল্য বিবেচনায় একজন পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার করার দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এ দাবিতে সংগঠনটি মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *