Skip to content

দলীয় কাজে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করবেন জি এম কাদের

বেনার নিউজ:

আদালতের এক অস্বাভাবিক আদেশের ফলে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চলমান রাজনৈতিক সংকট আরও জটিল হয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দলীয় সব কাজের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত, যা নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছেন আইনজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। 

এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা বেনারকে জানিয়েছেন জি এম কাদের। বৃহস্পতিবার তিনি বেনারকে বলেন, এই রায় অগ্রহণযোগ্য।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সামরিক শাসক লে. জেনারেল এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলীয় প্রধানের পদ নিয়ে তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জি এম কাদের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁদের পক্ষে দলে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। চলমান সেই বিরোধ নতুন মোড় নিয়েছে আদালতের এই আদেশের মাধ্যমে।

দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য ও রওশন এরশাদপন্থী জিয়াউল হক মৃধার দায়ের করা একটি মামলা শুনানির পর গত সোমবার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দল পরিচালনার সব কাজের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আদেশ দেয়া আদালতের কাজ নয়।”

আমি বিশ্বাস করি বিচারিক আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে যদি জি এম কাদের আপিল করেন এবং সেই আপিল যদি কোনো ভালো বিচারপতির বেঞ্চের কাছে যায়, সেক্ষেত্রে তাঁরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন,” বলেন অধ্যাপক মিজান।

আদালত এমন আদেশ দিতে পারেন না। আমি এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে আপিল করব,” বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন জি এম কাদের।

তবে মামলার বাদী জিয়াউল হক মৃধা সাংবাদিকদের বলেছেন, আদালত এমন সিদ্ধান্ত দিতে পারে।

এদিকে দলের মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে আগামী রোববার বিচারিক আদালতে উপস্থিত হবো। যদি বিচারিক আদালত এটি ভ্যাকেট (বাদ) না করে তাহলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।”

কেন এই মামলা?

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে দলের অন্যতম নেতা,” বলেই তাঁকে জি এম কাদের তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন বলে বৃহস্পতিবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন মামলা দায়েরকারী জিয়াউল হক মৃধা

তাঁকে দলের গঠনতন্ত্রের “২০ ধারার একটি উপধারা অনুযায়ী” বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই ধারা অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান যে কোনো নেতা-কর্মীকে কোনো কারণ না দেখিয়েই দল থেকে বের করে দিতে পারেন।

আমি ৪০ বছর ধরে জাতীয় পার্টি করি। উনি আমাকে ওই ধারা অনুযায়ী বের করে দেবেন, এটি হতে পারে না। আমি চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি এবং আদালত আমার পক্ষে আদেশ দিয়েছেন,” বলেন জিয়াউল হক মৃধা।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৬ আসন পেয়ে সংসদে প্রধান বিরোধীদল হয় জাতীয় পার্টি। বিরোধী দলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ।

শারীরিকভাবে অসুস্থ রওশনকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদ দিয়ে দলের চেয়ারম্যান হন জি এম কাদের। মন্ত্রী পদমর্যাদায় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা থেকে যান রওশন এরশাদ। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সংসদে অনুপস্থিত।

বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ রওশন এরশাদ গত বছর ৫ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক যান। সাত মাস পর ২৭ জুন দেশে ফিরে একটি সভা আহ্বান করলে জি এম কাদেরসহ দলের নেতাদের অধিকাংশ সংসদ সদস্য সেখানে অনুপস্থিত থাকেন।

পরবর্তীতে ৫ জুলাই আবার ব্যাংকক চলে যান রওশন এরশাদ এবং তিনি বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন।

আগস্টের শেষে জাতীয় পার্টির সকল সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সাথে দেখা করে রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করতে চিঠি দেন।

এর কয়েকদিন পরই দলের সাংসদ ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানান, তিনি জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে মানেন না। এই প্রেক্ষাপটে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বহিষ্কার করেন জি এম কাদের।

এদিকে জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে স্বীকৃতি দেননি স্পিকার। এর প্রতিবাদে সংসদের চলমান অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। দলটি জানায়, জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত তাঁরা সংসদে যাবেন না।

তবে সরকারী দলের তৎপরতার কারণে পরের দিনই সংসদে যোগ দেয় জাতীয় পার্টি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত রওশন এরশাদ। অন্যদিকে জি এম কাদের সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন জোটে নেই জাতীয় পার্টি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন অলঙ্কৃত করে। এই বিরোধী দলের দুই সদস্য আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সভায়ও যোগ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *