Skip to content

দাসপ্রথায় কলঙ্কিত ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইলেন ডাচ রাজা | আন্তর্জাতিক

দাসপ্রথায় কলঙ্কিত ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইলেন ডাচ রাজা | আন্তর্জাতিক

<![CDATA[

ঔপনিবেশিক আমলের দাসপ্রথায় নেদারল্যান্ডসের কলঙ্কিত ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ডাচ রাজা উইলেম আলেকজান্ডার। তিনি বলেছেন, দাসপ্রথা একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। তার দেশের মানুষের করা এ অপরাধের জন্য তিনি ক্ষমা চাইছেন।

শনিবার (১ জুলাই) নেদারল্যান্ডসে দাসপ্রথা বিলোপের ১৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে দাসপ্রথা ও দাস ব্যবসায় নেদারল্যান্ডসের ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট। তার সরকারের মন্ত্রীরা ডাচ উপনিবেশগুলো পরিদর্শনও করেন।

 

নেদারল্যান্ডসের অধিবাসীদের ডাচ বলা হয়। ঔপনিবেশিক আমলে স্পেনীয় ও পর্তুগিজদের অনুসরণে তারা দাস ব্যবসা শুরু করে। এরপর প্রায় আড়াইশ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাস ব্যবসা চালায় তারা।

 

১৮৬৩ সালে দাস ব্যবসা বিলোপ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রধানত আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রায় ৬ লাখ মানুষকে দাস হিসেবে ক্যারিবীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে বিক্রি করা হয়েছিল।

 

আরও পড়ুন: বিশ্বে ‘আধুনিক দাসত্বে’ বন্দি ৫ কোটি মানুষ

 

শনিবার (১ জুলাই) ছিল নেদারল্যান্ডসে দাসপ্রথা ও দাস ব্যবসা বিলোপের ১৬০তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ডাচ রাজধানী আমস্টারডামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাজা উইলেম আলেকজান্ডার।

 

তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমি দাসপ্রথার ডাচ ইতিহাসের কথা স্মরণ করছি এবং মানবতাবিরোধী এই অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাদের রাজা হিসেবে ও সরকারের একজন সদস্য হিসেবে আমি নিজেই অপরাধ স্বীকার করছি। আর আমি যে কথা বলছি, তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি।’

 

রাজা উইলেম আরও বলেন, ‘জাত্যাভিমান আজও ডাচ সমাজের এক বড় সমস্যা হয়ে আছে। আর সবাই আমার এই দোষ স্বীকারের বিষয়টি ভালভাবে নেবে না। যাই হোক, সময় বদলে গেছে এবং শিকলও ভেঙে পড়েছে।’

 

বক্তব্যে ‘কেটি কোটি’ বলে একটি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন রাজা উইলেম। এটি সুরিনামি ভাষার একটি শব্দ। অর্থ ‘শিকল ছিন্ন হয়েছে’। শব্দটি উচ্চারণ করার পরপরই রাজধানী ওস্তারপার্ক দাসত্ব স্মৃতিসৌধের চত্বরের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া কয়েক হাজার ডাচ হাততালি দিয়ে রাজার বক্তব্যকে স্বাগত জানান।

 

আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় আইন করেও রোখা যাচ্ছে না আধুনিক দাসত্ব

 

দাসপ্রথায় নেদারল্যান্ডসের সম্পৃক্ততার শুরু ১৭শ শতকে। এর আগেই স্পেন-পর্তুগালের মতো সাবেক ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো দাস বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল।

 

ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (ডব্লিউআইসি) মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বৃহৎ অংশে উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে এবং সেখানকার চিনি, তুলা, কফির বাগানগুলোতে কাজ করানোর জন্য আফ্রিকা থেকে মানুষ কিনে আনত।

 

লেইডেন ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা অনুসারে, ১৬১২ থেকে ১৮৭২ সালের মধ্যে ডাচরা গোল্ড কোস্ট (বর্তমান ঘানা) বরাবর প্রায় ১০টি দুর্গ নিয়ন্ত্রণ করত, যেখান থেকে দাসদের আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হতো।

 

১৮শ শতকে বর্তমান সুরিনাম ও গায়ানাও ডাচদের দাস কেনাবেচার অন্যতম বড় বাজার হয়ে ওঠে। এমনকি এশিয়ার লোকদেরও শোষণ করেছিল ডাচ। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ১৭শ শতক থেকেই এশীয়দের দাস বানানো শুরু করে তারা।

 

আরও পড়ুন: বিশ্বের প্রভাবশালী এই গণমাধ্যমের মালিকরা ছিলেন দাস ব্যবসায়ী

 

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের ২০০৮ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ডাচরা প্রধানত আরাকানের (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) লোকদের দাস বানিয়ে তৎকালীন বাটাভিয়াতে পাঠাতো।

 

বাটাভিয়া ছিল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান ঘাঁটি, যা আজকের ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা বলে পরিচিত। ১৮৬৩ সালে নেদারল্যান্ডস দাসপ্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কিন্তু সুরিনামের মতো কিছু জায়গায় ডাচ দাসপ্রথা শেষ হয় আরও ১০ বছর পর।

 

ফ্রি ইউনিভার্সিটি অফ আমস্টারডামের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের অধ্যাপক পেপিজন ব্র্যান্ডন বলেছেন, নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় সমাজগুলোর মধ্যে অন্যতম, যাদের দাসপ্রথার সাথে সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও ব্যাপক সম্পর্ক ছিল। যার প্রভাব আজও রয়ে গেছে ডাচ সমাজে।

 

আরও পড়ুন: মার্কিন কংগ্রেসের বহু নেতার পূর্বপুরুষ দাসমালিক ছিলেন

 

বিবিসির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন মতে, ডাচ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অশ্বেতাঙ্গ কর্মকর্তারা বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হয়েছেন এবং তারা পদোন্নতির ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। 

 

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *