<![CDATA[
একসময় আদালতকে নিয়ে মানুষের মুখে নানান জল্পনা ও কুরুচিপূর্ কথা শোনা গেলেও বর্তমানে বিচারকের বিভিন্ন পদক্ষেপে আদালতকে নিয়ে দূর হয়েছে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা।
বিচার কার্যক্রম পরিচালনার সময় সর্বসাধারণের মধ্যে বিভিন্ন ভ্রান্তি দূর করতে আদালতের দরজায় ১১টি অনুরোধ টাঙিয়ে এক ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মো. মতিউর রহমান।
রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মতিউর রহমান।
তিনি জানান, পঞ্চগড় জেলার বিচারপ্রার্থী মানুষের প্রতি এই আদালতের বিচারকের ১১টি অনুরোধ আদালতের দরজায় টাঙানো হয়েছে। এতে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী মানুষের দুশ্চিন্তা দূরীকরণে নতুন এ পদক্ষেপে আরেকটি নতুন নজির স্থাপন হলো।
মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘নিজস্ব চিন্তা থেকে আমি এটা করেছি। এতে বিচারপ্রার্থী মানুষের আদালত সম্পর্কে ভীতি দূর হচ্ছে এবং তারা ভালো ফল পাচ্ছে। আমার আদালতেই আমি এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর আগে আমি একাধিক পারিবারিক মামলার বিচ্ছেদের মধুর সমাপ্তি করেছি। তবে যা কিছু করছি, নিজের মনুষত্বকে জাগিয়ে কাজগুলো করছি।’
আরও পড়ুন: সারা দেশের আদালতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
আদালতের দরজায় টাঙানো ১১ অনুরোধ হলো:
১) ছোটখাটো বিরোধগুলো নিজেদের মধ্যে আপসে মীমাংসা করুন। আপনার শিশুসন্তানের কথা বিবেচনা করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্বগুলো মীমাংসা করুন। সংসার সমাজে ও পরিবারে শান্তি ফিরে আসবে। মামলা আপস হলে বিচারকের কাছ থেকে আপনি পাবেন দুটি চকলেট। আর আপনার আইনজীবীও পাবেন দুটি চকলেট।
২) ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন, প্রত্যেকটি মামলা শুনানির জন্য ডাক পড়বে।
৩) causelist.judiciary.org.bd এই লিংকে অত্র আদালতের প্রতিটি মামলার পরবর্তী তারিখ এবং ফলাফল দেয়া আছে। প্রয়োজনে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলে এই লিংক থেকে আপনার মামলার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
৪) অত্র আদালত হতে কোনো সাক্ষীকে ফেরত দেয়া হয় না। সমন পেয়ে সাক্ষী দিতে আসলে আদালতের ভিতরে পিছনের বেঞ্চে বসে দয়া করে অপেক্ষা করুন। যথাসময়ে আপনার মামলার ডাক পড়বে। সাক্ষ্য প্রদানে আপনাকে সহযোগিতা করা হবে।
৫) আপনি পরীক্ষার্থী হলে বা সামনে আপনার পরীক্ষা থাকলে অযথা সময় নষ্ট না করে আদালতের বারান্দায় রক্ষিত বেঞ্চে বসে বই বা নোট পড়তে পারেন। এজন্য সঙ্গে বই নিয়ে আসুন।
৬) এই আদালতের বিচারকের কাছে শিশুদের জন্য চকলেট আছে। শিশু কান্নাকাটি করলে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। দুগ্ধপোষ্য শিশু বা ছোট শিশু থাকলে তার মামলা আগে শুনানি করা হয়।
৭) নামাজের সময় দয়া করে অপেক্ষা করুন। নামাজের পর আপনার মামলার শুনানি হবে।
৮) পিছনের একটি বেঞ্চ সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষের বসার ব্যবস্থা আছে। দয়া করে তাদের বসতে সহায়তা করুন।
৯) এই আদালতে দীর্ঘ সময় ধরে মামলার শুনানি হয়। আদালতের নিচতলায় ক্যান্টিনে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ক্ষুধা লাগলে নিজ টাকায় খেয়ে আসুন। টেনশন করবেন না, নিশ্চিত থাকুন–আপনার মামলার শুনানি হবে।
১০) আদালতে আসামির কাঠগড়ায় ও হাজত থানায় আসামিদের পড়ার জন্য দুটি বুক সেলফ আছে, যা ‘আদালত পাঠাগার’ নামে পরিচিত। আপনি প্রয়োজনে সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন।
১১) মনে রাখবেন, ন্যায়বিচার পাওয়া আপনার অধিকার, কোনো অনুকম্পা বা দয়া নয়।
]]>