Skip to content

দৈনিক দিনকাল বন্ধ করেছে কে? | বাংলাদেশ

দৈনিক দিনকাল বন্ধ করেছে কে? | বাংলাদেশ

<![CDATA[

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মালিকানাধীন দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পত্রিকাটির প্রকাশনা বহাল রাখার আপিল খারিজ করে দেয়। এরপরই মাঠে নামে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সাংবাদিকরা। তাদের দাবি, ষড়যন্ত্র করে পত্রিকাটি বন্ধ করেছে সরকার। তবে দেখা যাচ্ছে, আইনি প্রক্রিয়ায় বন্ধ হয়েছে দৈনিক দিনকাল।

২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ‘প্রকাশক কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করায়’ পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলের আদেশ জারি করে। পরবর্তীতে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ একই বছর ২৯ ডিসেম্বর এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। এরপর থেকে পত্রিকাটি তাদের প্রকাশনা চালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দৈনিক দিনকালের প্রকাশনা বন্ধের বিরুদ্ধে করা আপিলটি খারিজ করে দেয়। এতে আর প্রকাশিত হতে পারছে না দেশের পুরনো এই দৈনিকটি।

পত্রিকা বন্ধের এই খবরে তাৎক্ষণিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে গণমাধ্যমের যে কোনো স্বাধীনতা নেই, তা আবারও প্রমাণিত হলো। দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছিল। বিরোধী দলের একমাত্র পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল সরকারের চরম হিংসা চরিতার্থ করার বহিঃপ্রকাশ।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান দুঃসময়ে সব গণমাধ্যমের কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের চরমভাবে নিগৃহীত করা হচ্ছে। একইসাথে সরকারের সমালোচনা করায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন। আমি দৈনিক দিনকাল পত্রিকা বন্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন ও মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতাদের ভাষায় ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়

আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গণমাধ্যম কী বলছে?

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নিউইয়র্কের কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ ডি লা সেরনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দৈনিক দিনকাল বন্ধ করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর স্পষ্ট আক্রমণ।’

এর আগে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম ওইয়ন শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বিরোধী দলের একমাত্র সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবাদের জন্ম দেয়।’

শুধু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই না, দেশীয় কয়েকজন সাংবাদিক নেতা এবং সাংবাদিক সংগঠনও ছড়াচ্ছে মিথ্যা তথ্য। তারা বলছে, ‘সরকার এই সংবাদমাধ্যমটি বন্ধ করে দিয়েছে।’

দিনকালের এই বন্ধের পেছনে সরকারের আদৌ কোনো ভূমিকা রয়েছে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

তবে প্রবীণ সাংবাদিকদের মতে, দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও এক সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার কারণে সে অবস্থান হারিয়ে ফেলে। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হওয়া আমার দেশ পত্রিকাটি ধীরে ধীরে বিএনপির মুখপাত্র হয়ে ওঠে। এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে আমার দেশ বন্ধ হওয়ার পর বিএনপি আবারও নিজেদের স্বার্থে দিনকালকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।

তাই আইনগতভাবে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হলেও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে চাপে রাখার জন্য এ দায় সরকারের ওপর চাপাচ্ছে বিরোধীপক্ষ। দিনকাল বন্ধে আদতে সরকারের কোনো হাত নেই বলে মনে করেন প্রবীণ সাংবাদিকরা।

সরকার কি আদৌ বন্ধ করেছে দৈনিক দিনকাল?

আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে বন্ধ হওয়া দৈনিক দিনকাল বন্ধের দায় সরকারের ওপর চাপানো সম্পূর্ণ অবান্তর এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, দিনকাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত এবং তারা প্রেস কাউন্সিলে প্রকাশনা বন্ধের বিরুদ্ধে যে আপিল করেছে তা খারিজ করেছে প্রেস কাউন্সিল। দেখা যাচ্ছে, আদালত ও প্রেস কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে পত্রিকাটি বন্ধ হয়েছে; এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। তারা আরও বলছেন, দিনকাল কর্তৃপক্ষের সুযোগ রয়েছে উচ্চ আদালতে আপিল করার।

আরও পড়ুন: ডেইলি স্টারের একপেশে সাংবাদিকতা

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া, আদালতের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত এসেছে এবং আদালতের মাধ্যমেই এর প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে সরকারের কোনো হাত নেই। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে যেখানে একজন দণ্ডিত প্রকাশকের (তারেক রহমান) ব্যাপারে কথা রয়েছে। দীর্ঘদিন প্রকাশক দেশের বাহিরে রয়েছেন, কোনো বড় ব্যত্যয় ঘটলে এর দায় কে নেবে, উনিতো দেশেই নেই।’

তবে সাংবাদিক হিসেবে তিনি মনে করেন, যেসব জায়গায় সাংবাদিকদের কর্মপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপার রয়েছে সেসব জায়গায় কোনো অন্যায় পদক্ষেপ যেন সরকার না নেয় এবং পত্রিকার পক্ষ থেকেও যেন না নেয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘দৈনিক দিনকাল কী কারণে বন্ধ করা হয়েছে, আমরা তা স্পষ্টত জানি না। তবে দিনকালের যিনি প্রকাশক তারেক রহমান, তিনি পলাতক এবং সাজাপ্রাপ্ত। আইনগত বিষয় রয়েছে এখানে; কেননা বন্ধ করার ডিক্লারেশনে প্রকাশক একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা প্রেস কাউন্সিলে আবদেন করলে তারাও তা খারিজ করে দেয়।’

দিনকাল পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রেস কাউন্সিল একটা স্বাধীন বডি, সরকারতো আর এটার প্রতিনিধিত্ব করে না, একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এই প্রেস কাউন্সিল। দিনকাল কর্তৃপক্ষ যদি চায় তারা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। আমি মনে করি না সরকারের এখানে কোনো ভূমিকা রয়েছে; এটা সম্পূর্ণ একটা আইনি প্রক্রিয়া। সরকার চাইলেই কোনো পত্রিকা বন্ধ করতে পারে না।’

আরও পড়ুন: বিবিসির এ কেমন সাংবাদিকতা!

এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমি বলতে চাচ্ছি কোনো নিউজের জন্য কোনো পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার, এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। রাজনৈতিক কারণে বা আক্রোশে সরকার পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে বা যেকোনো মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে, এমন কোনো নজির নেই। বরং আমরা দেখতে পাই, সরকারবিরোধীদের পত্রিকাই বেশি। রাজনৈতিক পত্রিকা বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রায়ই দেখি, তারা সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করছে; তবু সরকার তাদের প্রতি কোনো ধরনের কঠোরতা দেখাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এবং সব মিডিয়াই সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। দৈনিক দিনকাল সম্পূর্ণ আইনের মধ্য দিয়েই বন্ধ হয়েছে। বেআইনিভাবে বন্ধ করার এখতিয়ার সরকারের নেই। শাহাবুদ্দিন সাহেব যখন রাষ্ট্রপতি তখন আমরা অ্যাকটিভ ইউনিয়ন করি। তখন আমরা আন্দোলন করি যাতে সরকার কোনো এক্সিকিউটিভ অর্ডারে কোনো পত্রিকা না বন্ধ করতে পারে; এমন ধারা ছিল আগে, সে ধারা আমরা বদল করেছি।’

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *