<![CDATA[
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চাকরির জন্য গিয়ে প্রতারণা শিকার হন দিনাজপুরের এক যুবক। চাকরির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নেয় দুই লাখ টাকা। এমন প্রতারণার শিকার হয়েও একবছর পর নিজেই প্রতারণার অভিযোগে জেল খাটলেন ওই যুবক।
ভুক্তভোগী যুবকের নাম রেজওয়ান হোসেন (২৩)। তিনি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের নুরন্নবী মিয়ার ছেলে। বর্তমানে তিনি স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
রেজওয়ানের পরিবার জানায়, উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ২০২১ সালে বিজিবির চাকরির জন্য মাঠ করতে যায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর বিজিবির ২৯ নম্বর ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে। সব জায়গায় সফল হলেও চূড়ান্ত মেডিকেল বোর্ড থেকে তিনি বাদ পড়েন। এরপর একটি প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েন তিনি।
ওই বছরের ২২ নভেম্বর মেডিকেল বোর্ড হবার দিন রাতেই অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে বিজিবির কর্মকর্তা পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন দেন। রসাত্মক কথার মারপ্যাঁচে ফেলে তিনি রেজওয়ানের কাছে ১২ লাখ টাকা দাবি করলে এতে রাজি হয় সে। পরে অগ্রিম ১ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় গিয়ে ওই প্রতারকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রেজওয়ান।
আরও পড়ুন: আইজিপির নামে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা, ৩ বছরের কারাদণ্ড
সেখানে গিয়ে রেজওয়ান জানতে পারেন মানোয়ার নামে এক বিজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। কথা অনুযায়ী মানোয়ারকে এক লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে রেজওয়ানকে মেডিকেল টেস্ট করান তিনি। এরপর চাকরি নিশ্চিত জানিয়ে মানোয়ার তার কাছে আরও দেড় লাখ টাকা দাবি করে। বিশ্বাস অর্জন হয়ে যাওয়ায় বাড়ি থেকে বিকাশের মাধ্যমে রেজওয়ান আরও দেড় লাখ টাকা মানোয়ারকে দেন।
এরপর মানোয়ার রেজওয়ানের হাতে একটি নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেয় এবং চাকরিতে যোগদানের পর বাকি আরও সাড়ে ৯ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। এর একপর্যায়ে মানোয়ার ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে রেজওয়ানের স্বাক্ষর নেয়।
নিয়োগপত্র নিয়ে যোগদান করতে গিয়ে রেজওয়ান জানতে পারে নিয়োগপত্রটি ভুয়া এবং তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছে। এরপর ওই প্রতারকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে সব আশা ছেড়ে দিয়ে পড়াশুনা শুরু করে রেজওয়ান।
জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে জানা যায় প্রতারক মানোয়ার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পশ্চিম দূর্গাপুর-পশ্চিমপাড়া গ্রামের জুয়াদ আলীর ছেলে। পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৭ সালের ২৭ জুলাই।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ডিআইজি পরিচয়ে প্রতারক গ্রেফতার
দীর্ঘদিন পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতারণার শিকার রেজওয়ানকে খুঁজতে যায়। তখন খোঁজ নিয়ে রেজওয়ানের পরিবার জানতে পারে প্রতারক মানোয়ার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দেয়াকে কেন্দ্র করে উল্টো রেজওয়ানের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের আদালতে প্রতারণার মামলা করে।
গত ১৬ জানুয়ারি রেজওয়ান ঝিনাইদহের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি আদালত থেকে জামিন নিয়ে রেজওয়ান বাড়িতে আসে।
রেজওয়ান বলেন, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি বড়। বাবা অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে আছে। পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমার ওপর। এদিকে প্রতারকের চক্রান্তে আজ আমি নিজেই প্রতারক হয়ে বসে আছি। আমার শিক্ষা জীবন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। আমি যে প্রতারণার শিকার হয়েছি, তার সব প্রমাণপত্র আমার কাছে আছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
রেজওয়ানের বাবা নুরন্নবী মিয়া বলেন, প্রতারকের পাল্লায় আমার এতগুলো টাকা গেল। আবার আমার ছেলেই জেল খাটল। কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম ছেলের চাকরির জন্য। আজ আমি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি।
]]>