<![CDATA[
সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)। চীনের উদ্যোগে গঠিত এক আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। জোটটিতে ভারত, পাকিস্তান এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলো রয়েছে। জোটের মূল লক্ষ্য হলো, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো, মাদক পাচার রোধ, সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাসহ আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে জোর দেয়।
সম্প্রতি ভার্চুয়ালি জোটের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই জোটটি কী রাশিয়া তথা পুতিনের জন্য ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে কী? কিংবা জোটটি কী পুতিন এবং রাশিয়াকে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার মুখে একঘরে হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে?
চীন ছাড়াও সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলো হলো ভারত, রাশিয়া, কাজাখস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং উজবেকিস্তান। সর্বশেষ ইরানও এই জোটের সদস্য হয়েছে। এই জোটের বিশেষত্ব হলো, এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এককভাবে ধারণ করে। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশ এককভাবে এই জোটের।
জোটটির প্রকৃতি আসলে কী তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। এটিকে কেবল অর্থনৈতিক জোটও বলা যায় না, আবার সামরিক বা আঞ্চলিক (ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো) জোটও বলা যায় না। বিশ্লেষকদের ধারণা, ক্রমেই একটি বহু মেরুক বিশ্ব সৃষ্টি করে সেখানে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করাই এই জোটের লক্ষ্য। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) হয়ে যাওয়া সম্মেলনে চীন এবং রাশিয়া উল্লেখ করেছে যে, জোটটি কেবল আর্থিক খাতে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে আরও বেশি কিছু করার সক্ষমতা রাখে। একই কথা প্রতিধ্বনিত করেছেন সদ্য সদস্য হওয়া দেশ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও।
আরও পড়ুন: সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার নবম সদস্য হলো ইরান
যাই হোক, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার মূল নিহিত ১৯৯৬ সালের ‘সাংহাই ফাইভ’ প্যাক্টে। এই চুক্তির মাধ্যমে সে সময় চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছিল। সে সময়কার সাংহাই ফাইভ এখন ৯ দেশের জোটে রূপ নিয়েছে এবং জোটটি নতুন সমস্যার-ইউক্রেন যুদ্ধ-মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে রাশিয়া সরাসরি একটি অংশীদার।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর অবস্থান স্পষ্ট নয়। কারণ কোনো দেশই সরাসরি এই যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ নেয়নি আবার রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের সমালোচনাও করেনি।
রাশিয়ার সঙ্গে সদস্য দেশগুলোর স্বার্থ দারুণভাবে জড়িত। চীন ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সীমাহীন বন্ধুত্বের’ ঘোষণা দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন দারুণভাবে বাড়িয়েছে। দুই দেশের প্রেসিডেন্টই দুই দেশের সম্পর্ককে ‘নতুন যুগে’ নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রাশিয়ার আরেক বন্ধু ভারত, আপাতদৃষ্টিতে নয়াদিল্লি পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গুরুত্ব বহন করে। তবে ভারত পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি মস্কোর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগও বজায় রেখেছে। এবং ইউক্রেন বিষয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে। তবে দেশটি জাতিসংঘ সনদের আলোকে ইউক্রেন সংকটের সমাধানের বিষয়ে বারবার আলোকপাত করেছে।
জোটের নয়া সদস্য ইরান রাশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী। দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সামরিক চুক্তি রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান রাশিয়াকে বেশ বড় পরিমাণ অ্যাটাক ড্রোন সরবরাহ করেছে।
আরও পড়ুন: মোদির নেতৃত্বে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন ও জিনপিং
তবে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা মসৃণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তা বলা যাবে না। কারণ জোটের একাধিক দেশের মধ্যে গভীর সংকট বিদ্যমান। যেমন চীন-ভারতের মধ্যে লাদাখ এবং অরুণাচলকে কেন্দ্র করে সংকট রয়েছে। সংকট এতটাই গভীর যে, দুটি দেশই একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। একই অবস্থা ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। ১৯৪৭ থেকে কাশ্মীর এবং অন্যান্য ইস্যুতে দুটি দেশ কখনোই একমত হতে পারেনি। ফলে জোট যতটা সফল হওয়ার কথা ততটা সফল হতে পারছে না।
এর বাইরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং রাশিয়ার এক সময়কার মিত্র কাজাখস্তান সাম্প্রতিক সময়ে মস্কো থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
যাই হোক সবমিলিয়ে জোট একেবারে মসৃণ গতি চলছে না। তবে তারপরও যদি সামগ্রিক চিত্র বিবেচনায় নেয়া যায়, তাহলে বলতে হয় চীন-ভারত এবং ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব রাশিয়ার ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তার একটি উদাহরণ হতে পারে পাকিস্তান। দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। সম্প্রতি তারা রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজাখস্তান ছাড়াও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এখনো রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে রয়েছে এবং দেশগুলোতে রাশিয়া বিপুল পরিমাণ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়া রাশিয়া এই জোটে নিজের উদ্ধার পাবারও রাস্তা খুঁজে পাবার চেষ্টা করবে। তাতে হয়তো অনেকটাই সফল হবে দেশটি।
আল জাজিরা থেকে সংক্ষেপে অনূদিত
]]>