<![CDATA[
ইউরোপের একসময়ের ফুটবলের প্রতিষ্ঠিত শক্তি যুগোস্লাভিয়া। বিশ্বকাপের মঞ্চেও তারা রেখেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তবে সাবেক সমাজতন্ত্রী দেশটি ভেঙে বেশকিছু স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়ার পর খর্ব হয় তাদের ফুটবল শক্তি। সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ সার্বিয়া বিশ্বকাপে চারবার অংশ নিয়েও পার হতে পারেনি গ্রুপ পর্ব। তবে কাতার বিশ্বকাপে দারুণ একটা স্কোয়াড নিয়ে নামছে তারা। বিশ্বকাপের চমক হওয়ার সব রসদে ঠাসা সার্বিয়া চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত পরাশক্তিদের।
সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ হিসেবে সার্বিয়ার ফুটবল ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। স্বাধীনতার পর ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে আলাদা দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলা দেশটি কাতার বিশ্বকাপে যাচ্ছে দারুণ এক দল নিয়ে। আগের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও মরুর দেশের বিশ্বকাপে দারুণ এক স্কোয়াড নিয়ে যাচ্ছে ঈগলরা। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া দলে আছেন বিশ্বের অন্যতম কয়েকজন তারকা। অধিনায়ক দুসান তাদিচ ছাড়াও য়্যুভেন্তাসের তরুণ স্ট্রাইকার দুসান ভ্লাহভিচ, সার্জ মিলানকোভিচ স্যাভিচ, অ্যালেক্সান্দার মিত্রোভিচের মতো তারকাদের নিয়ে দারুণ দলটি বিশ্বকাপে কঠিন চ্যালেঞ্জ দিতে প্রস্তুত ফেবারিটদের।
একনজরে সার্বিয়া ফুটবল দল:
ডাকনাম: দ্য ঈগলস
অংশগ্রহণ: ১৩বার* (১৯৩০, ১৯৫০, ১৯৫৪ ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭৪, ১৯৮২, ১৯৯০, ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১০, ২০১৮, ২০২২)
*২০০৬ এর আগে যুগোস্লাভিয়ার অংশ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নেয় সার্বিয়া। ২০০৬ সালে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো নামক স্বাধীন দেশ হিসেবে অংশ নেয় তারা। পরবর্তী সময়ে মন্টেনেগ্রো আলাদা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে ২০১০ বিশ্বকাপ থেকে সার্বিয়া একক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে।
সেরা সাফল্য: চতুর্থ স্থান (১৯৩০, ১৯৬২)
র্যাংকিং: ২১
কোচ: দ্রাগান স্ট্যাজকোভিচ
অধিনায়ক: দুসান তাদিচ
বিশ্বকাপের গ্রুপ: গ্রুপ জি (প্রতিপক্ষ: ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, ক্যামেরুন)
আরও পড়ুন:ব্রাজিলের ম্যাচ দেখবেন যেভাবে
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ফল: উয়েফার গ্রুপ ‘এ’তে শীর্ষস্থান অর্জন করে কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কাটে সার্বিয়া। পর্তুগাল, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ ও আজারবাইজানকে নিয়ে গড়া গ্রুপে ৮ ম্যাচে ৬টি জয় পাওয়া সার্বিয়া অপরাজিত থেকে নিশ্চিত করে বিশ্বকাপ। বাছাই পর্বে ১৮ গোল করা সার্বিয়া হজম করে ৯ গোল।
সাম্প্রতিক ফর্ম: উয়েফা নেশন্স লিগের লিগ বি’র গ্রুপ-৪ এ ফাইনালস নিশ্চিত করেছে সার্বিয়া। নরওয়ে, সুইডেন ও স্লোভেনিয়াকে নিয়ে গড়া গ্রুপে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করা সার্বিয়া ৬ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ৪ ম্যাচে। বাকি ২ ম্যাচে ১টি করে ড্র ও হার হয় তাদের।
কোচের পরিকল্পনা ও কৌশল: যুগোস্লাভিয়ার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার দ্রাগান স্ট্যাজকোভিচ ২০২১ সাল থেকে আছেন সার্বিয়ার কোচের দায়িত্বে। বলকানের ম্যারাডোনা নামে খ্যাত সাবেক এই ফুটবলারকে আর্সেনালে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে চেয়েছিলেন খোদ আর্সেন ওয়েঙ্গার। কোচ হিসেবে তিনি কতটা সম্ভাবনাময় তা বুঝতে এটুকু তথ্যই যথেষ্ট। পারফেক্ট ফুটবলে বিশ্বাসী স্ট্যাজকোভিচ আক্রমণাত্মক ফুটবলে বিশ্বাসী। গতিশীল, ছন্দময় পাসিং ফুটবলেই আস্থা এই কোচের। সাধারণত ৩-৫-২ ফর্মেশনে দলকে খেলানো এই কোচ প্রয়োজনে অন্য ফর্মেশনেও দ্রুত শিফট করেন দলকে। সে ক্ষেত্রে প্রায়ই ৩-৫-১-১ ফর্মেশনেও দলের খেলা বদলে ফেলেন এই কোচ।
উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়:
সার্জ মিলানকোভিচ স্যাভিচ: সিরি আ’র ক্লাব ল্যাজিওর এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার বলতে গেলে অলরাউন্ডার। প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে ঠেকাতে যেমন তিনি সিদ্ধহস্ত, তেমনই বল পায়ে দলের খেলার টেম্পো ঠিক করে দিতেও জুড়ি নেই। দক্ষ তিনি প্লে মেকিংয়েও। আর গোলের দিকে তার একটা চোখ সবসময়ই সুযোগসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকে। এককথায়, পরিপূর্ণ এই মিডফিল্ডারের দুর্বলতা খুঁজে বের করাটাই কঠিন।
ইয়াহিয়া তোরে ও নেমানজা মাতিচকে আদর্শ মানা এই ২৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডার গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ১১ গোল করার পাশাপাশি করেছেন ১২টি অ্যাসিস্ট।
দুসান তাদিচ: আয়াক্সের ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড দুসান তাদিচকে নিয়ে আলোচনাটা কম হলেও দারুণ এক খেলোয়াড় তিনি। বিশ্বকাপ শুরুর দিন ৩৪ বছর পূর্ণ করতে চলা আয়াক্স তারকা গত মৌসুমে ১৬ গোল করার পাশাপাশি করেছিলেন ২২টি অ্যাসিস্ট। ক্রিয়েটিভিটি, আনপ্রেডিক্টিবিলিটি ও নিঃস্বার্থ মনোভাবের কারণে সার্বিয়া দলের অন্যতম চাবিকাঠি তিনি।
তবে তাদিচের সবচেয়ে বড় গুণ সতীর্থদের থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারা। দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক হিসেবে কাতারে দলকে অনুপ্রাণিত করতে নিজের সেরাটাই দেবেন তাদিচ।
আরও পড়ুন:অতীত পরিসংখ্যানে ব্রাজিল-সার্বিয়া
যার দিকে থাকবে নজর:
দুসান ভ্লাহভিচ: য়্যুভেন্তাসের এই স্ট্রাইকার মাত্র ২২ বছর বয়সেই নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারে পরিণত করেছেন। গত মৌসুমে লিগের মাঝপথে দল বদলানো ভ্লাহভিচ নতুন ক্লাবে মানিয়ে নিতে একটুও সময় নেননি। লিগ শেষ করেন ২৪ গোল নিয়ে। গত মৌসুমটা যেখানে শেষ করেছিলেন, নতুন মৌসুমটাও সেখান থেকেই শুরু করেছেন তিনি। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত লিগে করেছেন ১০ ম্যাচে ৬ গোল।
ইতিহাস: সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ হিসেবে একসময় নিয়মিতই বিশ্বকাপ খেলেছে সার্বিয়া। ১৯৩০ বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়া যুগোস্লাভিয়া ১৯৫৪-১৯৬২ পর্যন্ত টানা তিন আসরে কমপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। তার মধ্যে শেষ আসরে দেশটি ফের চতুর্থ হয়।
স্বাধীন দেশ হিসেবে ২০০৬ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে আসে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো নামে। তবে সে বিশ্বকাপের মাঝামাঝি সময়েই ফের ভেঙে দুই টুকরো হয় দেশটি। সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায় মন্টেনেগ্রো। সে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে তারা। তাদের বিপক্ষেই লিওনেল মেসি পান বিশ্বকাপে তার প্রথম গোলের দেখা।
২০১০ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলা সার্বিয়া বাদ পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকে।
]]>