Skip to content

বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল | বাংলাদেশ

বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল | বাংলাদেশ

<![CDATA[

২০০২ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে যাত্রা শুরু করা বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৮ মে দুপুরে অস্থায়ী আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মান্না চক্রবর্তী হাসপাতালটি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

হাসপাতালের স্টাফ ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জামানতের টাকা আত্মসাৎ, বিদেশি সাহায্য বন্ধ হওয়াসহ নানা কারণে বিশেষায়িত হাসপাতালটির এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের প্রায় এক হাজার ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগী।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তর অঞ্চলের নীলফামারী জেলাসহ ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার মানুষের ফাইলেরিয়া (গোদ রোগ) রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। আর ভৌগলিক সুবিধার জন্য এ রোগের চিকিৎসার জন্য ২০০২ সালে জাপান সরকারের কোটি অর্থায়নে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় যাত্রা শুরু করে বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে।

হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই সময় স্থানীয়ভাবে ১৮ জন দেশি-বিদেশি চিকিৎসক নিয়োগ দেন। জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণা কর্মীরা আসেন এখানে। এরপর ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট সৃষ্টি হয়। পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। মুখ ফিরিয়ে নেন দাতা সংস্থাগুলো। এর পর থেকে ধুঁকে ধুঁকে চলতে থাকে এ হাসপাতালটি।

২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে টোকেন মূল্যে চিকিৎসা দেয়ার প্রত্যয়ে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা লেপরা বাংলাদেশর সঙ্গে বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের স্বাস্থ্য বিষয়ক সব ধরনের সহযোগিতা করবে লেপরা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিন পরিচালকের দায়িত্ব নেন। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে প্রায় ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। প্রত্যেকের কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এভাবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেন পরিচালক। এরপর থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জামানতের টাকা ও বেতন পরিশোধের দাবি জানালে বিভিন্ন অজুহাতে তা দেয়া হচ্ছে না।

আরও পড়ুন:  বরগুনায় জোড়া লাগানো যমজ কন্যাশিশুর জন্ম

হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসকসহ ৩৫ জন কর্মচারীর কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতনের দাবিতে সম্প্রতি তারা কর্মবিরতি পালন করলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। বেতনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেকেই চলে গেছেন। পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এখন আর হাসপাতালে যান না। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে নেসকো কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালটি তিন মাস ধরে বিদ্যুৎবিহীন। ১৫ দিন আগে জেনারেটর দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিলেও এখন সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চিকিৎসকরাও যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। রোগী বহনের অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা কমিটির এক সদস্য ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বে পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও হাসপাতালের সমন্বয়কারী পদত্যাগ করেছেন। দৈনিক আয়ের অর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে জমা হয়েছে পরিচালকের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে।

তারা আরও জানান, হাসপাতালের অস্থায়ী আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মান্না চক্রবর্তী গত ৮ মে দুপুরে হাসপাতালটি বন্ধ করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর থেকে হাসপাতালটি বন্ধ রয়েছে।

ডা. মান্না চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কর্মচারীদের বেতন বন্ধ। হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, প্রয়োজনীয় জনবলের ও আসবাবপত্র অভাব, অপারেশন থিয়েটরসহ অন্যান্য বিভাগের যন্ত্রপাতি এখনও বুঝে পাননি তিনি। কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অনধিকার চর্চা, পেশি শক্তির ব্যবহার ও থেমে থেমে আরএমও ও তার অধীনস্থ কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। তাই এরূপ পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা বর্তমান সময়ে সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরিচালকে চিঠি দিয়ে হাসপাতাল বন্ধ করা সুপারিশ করেছি।

হাসপাতালের প্রধান হিসাব রক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মিলন জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আগে হাসপাতালের আয় থেকে পরিশোধ করা হতো। কিন্তু এক বছর ধরে আয়ের টাকা পরিচালক নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করছেন। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না। আমরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছি। এরপরও কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছেন না।

এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের পরিচালক রাকিবুল ইসলাম তুহিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *