<
অন্যদিকে খুলনায় মরিচের পরিবর্তে রান্নায় চুইঝাল ব্যবহার জনপ্রিয় হওয়ায় পঞ্চগড়ের পাইকাররা এর চারা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য দক্ষিণাঞ্চলে পাঠিয়ে থাকেন।
এদিকে, হাড়িভাসা ইউনিয়নের নাককাটি পাড়া গ্রামের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন বাড়ির আশপাশসহ ৪শ সুপারি গাছে এ চুইঝাল চাষ করছেন। এতে লাভের মুখ দেখছেন তিনিও।
আরও পড়ুন: কোরবানির ঈদে সরগরম ’চুইঝাল’ বাজার
শাকিল আরও জানান, বর্তমানে পুরো নাককাটিপাড়া গ্রামে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি চাষ হচ্ছে চুইঝালের। বাড়তি লাভের আশায় চাষ করছেন এই চুই গাছ। পঞ্চগড়ের মাটিতে রফতানিযোগ্য এই চুইঝাল আবাদ হয়ে থাকলেও কৃষি বিভাগের সহায়তা না পেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন চাষিরা। এমনকি সঠিক বাজার ব্যবস্থা না থাকায় সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে পাইকারদের মনগড়া দামে গাছ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ চাষিদের।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সময় সংবাদকে বলেন, ‘কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। চুইঝাল ঔষধি গুণসম্মত একটি গাছ হওয়ায় মরিচের বিকল্প মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাজারজাতকরণ ও সঠিকমূল্য পেতে চুইঝাল চাষিরা সংগঠিত হয়ে সমবায় ভিত্তিতে বাজারজাত করলে ভালো দাম পাবে।’
১০ বছর আগে অল্প পরিসরে চুইঝাল আবাদ শুরু হয় পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ও টুনিরহাট এলাকায়। চুই গাছ রোপণের ১ থেকে দেড় বছরের মাথায় পরিপূর্ণভাবে গাছটি বড় হয়ে উঠলে প্রতিগাছ থেকে ২০ কেজি করে চুইঝাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। চাষাবাদে বাড়তি খরচ না হওয়ায় বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকার ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে এ চুই ঝাল।

চুই গাছের শেকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল- ফল সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁসের মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে। মূলত, রান্নার জন্যে চুইঝালের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন ও পিপলাস্টেরল।
চুইয়ের শেকড়ে রয়েছে ১৩.১৫ শতাংশ পিপারিন। খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আইসোফ্লাভোন ও অ্যালকালয়েড নামক ফাইটোক্যামিকাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: তেল, কাঁচা মরিচ ছাড়া গরুর মাংস রান্না করবেন কীভাবে?
চুইঝাল পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ দূর করে। তাছাড়া গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে। আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করে শরীর সতেজ রাখতে সহায়তা করে। এটি ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। প্রসূতি মায়ের প্রসব-পরবর্তী ব্যথা প্রশমনে ভালো কাজ করে চুইঝাল। সদ্যপ্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা কমাতে চুইঝাল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগপ্রতিরোধে চুইঝাল বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সবশেষে বলা যায়, মরিচের বিকল্প হিসেবে চুইঝালের জনপ্রিয়তা বাড়লে দেশের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে ভেষজ গুণ থাকার কারণে অনেক রোগ-ব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
]]>