Skip to content

বাজারও গরম করছে, ভাগ্যও বদলাচ্ছে | বাংলাদেশ

বাজারও গরম করছে, ভাগ্যও বদলাচ্ছে | বাংলাদেশ

<![CDATA[

বছর দশেক আগে শখের বশে চুইঝালের ৫টি চারা বাড়িতে রোপণ করেছিলেন অলিয়র রহমান। এখন তিনি একটি চুইঝাল বাগানের মালিক। প্রতি মণ চুইঝাল বিক্রি করেন ১২ হাজার টাকায়। ঈদের সময় মণ বিক্রি করেন ১৫ হাজারে। এটা চাষেই ভাগ্য বদলেছে অলিয়রের। খুলনাঞ্চলে এটি মরিচের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।

চুইঝালের পাতা দেখতে পানপাতার মতো। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনাবাসীর কাছে এ চুইঝাল জনপ্রিয় মসলা জাতীয় একটি খাবার। আর এটি এখন আবাদ হচ্ছে পঞ্চগড়েও। তা আবার এখানে ‘চুইপান’ নামে পরিচিত। এ জেলার মাটি ভৌগোলিক কারণে উপযোগী হওয়ায় অতি সহজেই আবাদ হচ্ছে এ চুইঝালের। বাড়ির আঙিনা, সুপারি বাগানসহ বিভিন্ন গাছ বেয়ে বড় হচ্ছে চুইগাছ।

কোনো প্রকার যত্ন ছাড়াই সুপারি গাছে বেড়ে উঠছে চুইঝাল। ছবি: সময় সংবাদ

পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের টুনিরহাট ঘটবর এলাকার বাসিন্দা অলিয়র রহমান প্রধান। ১০ বছর আগে পাশের ইউনিয়ন হাড়িভাসায় চুইঝাল রোপণ করতে দেখে ৫টি চারা সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে লাগান। কয়েক মাসের মাথায় সাফল্যের মুখ দেখে সম্প্রসারণ করেন চুই গাছের বাগান। বর্তমানে পাইকারদের কাছে মণপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দুই ঈদ উৎসবে মণপ্রতি ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে অলিয়র রহমান প্রধান বছরে আয় করছেন ১ লাখ টাকা। এতে দুই বিঘা জমিতে দেশি পানসহ ‘চুইপান’ আবাদ করে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে লাভের মুখ দেখেছেন তিনি।

 

আরও পড়ুন: খুলনার বিখ্যাত ‘চুইঝাল’, অসংখ্য রোগের প্রতিষেধক

 

অলিয়র রহমান প্রধান সময় সংবাদকে বলেন, চুইঝালের চাহিদা অনেক বাড়ছে। পঞ্চগড়ের লোকাল পাইকাররা তা আমাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। অন্যান্য ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে উৎপাদন হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে। এলাকার অনেকেই এ গাছের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

 

অলিয়র রহমানের ছেলে শাকিল প্রধান বলেন, ‘চুই গাছের তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন না হলেও কিছুটা কীটনাশক স্প্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে। খুলনায় প্রচুর পরিমাণে চুই ঝালের চাহিদা থাকায় বাবা অলিয়র রহমান শখের বশে চুই ঝালের গাছ লাগালেও এখন বাণিজ্যিকভাবে তা চাষ করছেন। একই সঙ্গে চারা বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

 

সুপারি গাছে বেড়ে উঠা বিক্রি উপযোগী চুইঝাল। ছবি: সময় সংবাদ 

অন্যদিকে খুলনায় মরিচের পরিবর্তে রান্নায় চুইঝাল ব্যবহার জনপ্রিয় হওয়ায় পঞ্চগড়ের পাইকাররা এর চারা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য দক্ষিণাঞ্চলে পাঠিয়ে থাকেন।

 

এদিকে, হাড়িভাসা ইউনিয়নের নাককাটি পাড়া গ্রামের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন বাড়ির আশপাশসহ ৪শ সুপারি গাছে এ চুইঝাল চাষ করছেন। এতে লাভের মুখ দেখছেন তিনিও।

আরও পড়ুন: কোরবানির ঈদে সরগরম ’চুইঝাল’ বাজার

 

শাকিল আরও জানান, বর্তমানে পুরো নাককাটিপাড়া গ্রামে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি চাষ হচ্ছে চুইঝালের। বাড়তি লাভের আশায় চাষ করছেন এই চুই গাছ। পঞ্চগড়ের মাটিতে রফতানিযোগ্য এই চুইঝাল আবাদ হয়ে থাকলেও কৃষি বিভাগের সহায়তা না পেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন চাষিরা। এমনকি সঠিক বাজার ব্যবস্থা না থাকায় সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে পাইকারদের মনগড়া দামে গাছ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ চাষিদের।

 

তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সময় সংবাদকে বলেন, ‘কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। চুইঝাল ঔষধি গুণসম্মত একটি গাছ হওয়ায় মরিচের বিকল্প মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাজারজাতকরণ ও সঠিকমূল্য পেতে চুইঝাল চাষিরা সংগঠিত হয়ে সমবায় ভিত্তিতে বাজারজাত করলে ভালো দাম পাবে।’

 

১০ বছর আগে অল্প পরিসরে চুইঝাল আবাদ শুরু হয় পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ও টুনিরহাট এলাকায়। চুই গাছ রোপণের ১ থেকে দেড় বছরের মাথায় পরিপূর্ণভাবে গাছটি বড় হয়ে উঠলে প্রতিগাছ থেকে ২০ কেজি করে চুইঝাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। চাষাবাদে বাড়তি খরচ না হওয়ায় বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকার ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে এ চুই ঝাল।

 

চুইঝালের পাতা দেখতে অনেকটা পানপাতার মতো। ছবি: সময় সংবাদ

চুই গাছের শেকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল- ফল সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁসের মাংস ও গরুর মাংস রান্না করতে। মূলত, রান্নার জন্যে চুইঝালের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন ও পিপলাস্টেরল।

 

চুইয়ের শেকড়ে রয়েছে ১৩.১৫ শতাংশ পিপারিন। খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আইসোফ্লাভোন ও অ্যালকালয়েড নামক ফাইটোক্যামিকাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:  তেল, কাঁচা মরিচ ছাড়া গরুর মাংস রান্না করবেন কীভাবে?

 

চুইঝাল পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ দূর করে। তাছাড়া গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে। আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করে শরীর সতেজ রাখতে সহায়তা করে। এটি ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। প্রসূতি মায়ের প্রসব-পরবর্তী ব্যথা প্রশমনে ভালো কাজ করে চুইঝাল। সদ্যপ্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা কমাতে চুইঝাল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগপ্রতিরোধে চুইঝাল বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

 

সবশেষে বলা যায়, মরিচের বিকল্প হিসেবে চুইঝালের জনপ্রিয়তা বাড়লে দেশের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে ভেষজ গুণ থাকার কারণে অনেক রোগ-ব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
 

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *