Skip to content

বিএনপির মুখপাত্র দৈনিক দিনকাল বন্ধে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ

বেনার নিউজ:

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মুখপাত্র দৈনিক দিনকাল প্রকাশের অনুমতি বা ডিক্লারেশন বাতিল হওয়ায় দেশে ও বিদেশে উদ্বেগ ও নিন্দা অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ৯টি পশ্চিমা দেশের বাংলাদেশস্থ সংগঠন মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন (এমএফসি)।

এক বিবৃতিতে এমএফসি বলেছে “দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ডিক্লারেশন (প্রকাশ ও মুদ্রণের অনুমোদন) বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক সময়ে নিয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছি।”

ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হচ্ছে— অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র।

“গণতন্ত্রের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে স্বাধীন সংবাদপত্র ও বাকস্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে,” বলা হয় বিবৃতিতে।

কয়েক হাজার প্রচার সংখ্যার দৈনিক দিনকালের প্রকাশক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যিনি ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন।

যে কারণে বন্ধ করা হয়

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রকাশক তারেক রহমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করায়, ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অফিসের ঠিকানা ও ছাপাখানা পরিবর্তন করায় ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) আইন ১৯৭৩-এর বিধান অনুযায়ী পত্রিকাটির নিবন্ধন বাতিল করেন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

এই আদেশ হাতে পাওয়ার পর ২৭ ডিসেম্বর থেকেই প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসা পত্রিকাটি।

পরবর্তীতে ২৯ ডিসেম্বর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আপিল বোর্ডে। তার প্রেক্ষিতে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পত্রিকাটি প্রকাশের অনুমতি দেয় প্রেস কাউন্সিল।

কয়েক দফা শুনানি শেষে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনকালে কর্তৃপক্ষের আপিল আবেদন বাতিল করে দেয় বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বোর্ড। ফলে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় দৈনিকটির।

এ প্রসঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হক বেনারকে বলেন, “এই দৈনিকটি আর প্রকাশ হতে পারে না। প্রকাশ হতে হলে অবশ্যই তাদেরকে নিয়ম মেনে আসতে হবে।”

আর কোনো বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি বিচারপতি নিজামুল হক।

তবে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ওই আদেশে বলা হয়েছে, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) এক পত্রের মধ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে দৈনিক দিনকালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।

ওই সময় ডিএফপির মহাপরিচালক ছিলেন স. ম. গোলাম কিবরিয়া। এ প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বেনারকে বলেন, “দিনকাল পত্রিকাটির মালিকানা, প্রকাশক পরিবর্তন, প্রেস পরিবর্তন এবং এরকম অনেকগুলো সিদ্ধান্ত অতীতে হয়েছে যার কোনটিই পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ সরকারকে জানায়নি।”

এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রকাশনা আইন অনুযায়ী সরকারকে অবগত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরকম নানা অনিয়ম চিহ্নিত হওয়ায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।

ডিএফপির চিঠিতে দিনকালের প্রকাশক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করায়, ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অফিসের ঠিকানা ও ছাপাখানা পরিবর্তন করায় পত্রিকাটি বাতিল করার জন্য এ কার্যালয়কে অনুরোধ করে।

আইনি লড়াইয়ে যাবে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ

দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বেনারকে বলেন, “আমাদের কাগজের প্রকাশক জনাব তারেক রহমান আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর ২০১৬ সালেই তিনি এফিডেভিটের মাধ্যমে আহমেদ আজম খানকে প্রকাশকের দায়িত্ব দিয়ে একটি আবেদন লন্ডনস্থ বাংলাদেশে দূতাবাসে জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেটি কেন সরকার আমলে নেয়নি তা আমাদেরকে কখনো জানানো হয়নি।”

“আমাদের ধারণা, সরকার মূলত দিনকাল বন্ধ করে দেয়ার পূর্বপরিকল্পনা থেকেই দিনকাল প্রকাশকের এই আবেদন গ্রাহ্য করেনি,” বলেন তিনি।

এক সময় সরকার বিরোধী নানা প্রতিবেদন করে আলোচনায় থাকলেও গত কয়েক বছরের পত্রিকাটি পাঠক প্রিয়তা হারিয়েছে। অর্থকষ্টে থাকায় অনেক পুরোনো কর্মীও ছেড়ে গেছেন দিনকাল।

তবে শিমুল বিশ্বাসের দাবি এখনো কয়েকশ সাংবাদিক কর্মচারী এবং প্রতিনিধি কাজ করছেন দৈনিক দিনকালে।

তিনি জানান, আপিল বোর্ডের রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়া মাত্রই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে বসবেন পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

“দেশে একটিমাত্র বিরোধী পত্রিকা, যেখানে কয়েকশ মানুষের রুটিরুজির ব্যবস্থা। এটিকে বাঁচাতে নিশ্চয়ই আমরা আইনি পথে হাঁটব,” বলেন শিমুল বিশ্বাস।

প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই থেকে তিনি লন্ডনেই আছেন।

প্রতিবাদ অব্যাহত

১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক দিনকালের ডিক্লারেশন বাতিল করে আপিল বোর্ডের রায়ের পরপরই এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার পরদিন রাজপথে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিপন্থী সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় অধিকার সংগঠনগুলোও নিন্দা জানিয়েছে পত্রিকা বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের।

গত সোমবার বাংলাদেশে দৈনিক দিনকাল বন্ধসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের এই অবস্থান তুলে ধরেন মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক।

ওই ব্রিফিংয়ে ভার্চুয়ালি দৈনিক দিনকাল এবং অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে দুজারিক বলেন, “বাংলাদেশে বেশ কিছু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেভাবে সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে এরই মধ্যে এ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি।”

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) দিনকাল বন্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আগামী নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের পত্রিকা বন্ধ করে দেয়াকে ‘নির্মম আক্রমণ’ হিসেবে অবহিত করেছে সিপিজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *