Skip to content

বিপিএলের সমালোচনার পেয়ালা ভেঙেছেন স্বদেশিরা | সময় স্পেশাল

বিপিএলের সমালোচনার পেয়ালা ভেঙেছেন স্বদেশিরা | সময় স্পেশাল

<![CDATA[

খেলা শুরুর আগেই শুরু হয়ে যায় সমালোচনা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরের যাত্রা শুরু যেন সেই সমালোচনার বোঝা কাঁধে নিয়েই। তবে বোঝা হালকা করার দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের খেলোয়াড় এবং কোচরা। বোলিং-ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সমানতালে দলের দায়িত্বে সরব ছিলেন দেশি কোচরা। দিনশেষে তারা তুলে ধরেছেন সফলতায় ভরা প্রেক্ষাপট। তাতে বিপিএল সমালোচনার গ্লানি কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নতুন রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সগৌরবে দলটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আশার কথা হলো দলটি পরিচালনা করেছেন একজন দেশি কোচ এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশি খেলোয়াড়। শুধু তাই না প্রতিপক্ষতেও একই অবস্থা ছিল।

এবারের বিপিএল শুরুর আগেই সমালোচনা শুরু হয়ে যায় শীর্ষস্থান থেকে। খোদ বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলেন। তিনি এবার খুলনা টাইগার্সের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। শুরুতেই সুজন বিপিএলের অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আইপিএলের পরই আমাদের অবস্থান ছিল। কিন্তু পরে এসে অনেকেই আমাদের ছাড়িয়ে গেছে। এখন বিপিএলে প্রায় প্রতিটি দল ১০-১৫ কোটি টাকা খরচ করছে। বিনিময়ে কী পাচ্ছে তারা? কিছু স্পন্সর পেলেও তা থেকে বেশি টাকা আসে না। একটা দল এসে কয়েক বছর থাকে, তারপরে লস করে চলে যায়। এভাবে কী চলতে পারে?’

একই বিষয় নিয়ে আসরের মাঝপথে কথা বলেছিলেন কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেছিলেন, ‘আর্থিক কাঠামোর বিষয়টি পুরো দুনিয়া বোঝে, কিন্ত যাদের বোঝা দরকার কেবল তারা বোঝে না। একটা দল ২০-২৫ কোটি টাকা খরচ করে যখন একটি টুর্নামেন্টে খেলতে আসে, তাকে তো কিছুটা সাপোর্ট দেয়া লাগবে। তারা কোনো ইন্টারেস্ট ছাড়াই অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু বিষয়টি যাদের বোঝা দরকার তারা না বুঝলে আমার বলে লাভ নেই।’

আরও পড়ুন: এত ভালো বিপিএল এই প্রথম দেখলাম: পাপন

এছাড়া বিপিএলের রিভিউ সিস্টেম এডিআরএসের চরম সমালোচনা করে শাস্তির মুখে পড়েছিলেন কোচ সালাউদ্দিন। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এডিআরএস থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। আম্পায়াররা যা ইচ্ছা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেই হয়। যেটি খালি চোখে বোঝা যাচ্ছে, সেটি এডিআরএস দিয়ে হচ্ছে না…তাই আমার কাছে মনে হয় এর চেয়ে না থাকাই ভালো।’ এরপরেই বিসিবির আচরণবিধির ২.৭ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। যার শাস্তি হিসেবে কুমিল্লা কোচকে ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে তার ডিসিপ্লিনারি রেকর্ডে যোগ করা হয় তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট।

এর মধ্যে সমালোচনার বৈঠক চাঙ্গা করেন খেলোয়াড়রা। টাইমলাইনে এসে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বলেন, ‘বিপিএল যা তার চেয়ে ডিপিএল ভালো।’ এর আগে সাকিব বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি বিপিএলের সিইওর দায়িত্ব দেয়া হয়, আমার বেশিদিন লাগবে না। সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মাস সময় লাগবে সব ঠিক করতে। ২ মাস লাগারও কথা না। যেখানে সব বাদ দিয়ে নতুন করে ড্রাফট অকশন হবে, ফ্রি টাইমে বিপিএল হবে, আধুনিক প্রযুক্তি থাকবে, সম্প্রচারের মান ভালো থাকবে, হোম ও অ্যাওয়ে ভেন্যুতে খেলা হবে।’ সাকিবের মন্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন তারকা ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। তিনিও এই বিপিএল নিয়ে বলেছিলেন, ‘খালি চোখে যে কেউ দেখলেই বলবে এটা একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা।’

এতো সমালোচনার ভিড়ে বিপিএলকে রাঙিয়ে তোলার কাজটি করেন দেশি খেলোয়াড়রা। যেই সাকিব-মাশরাফী এতো সমালোচনা করেন, তারাই মাঠে নেমে পাল্টে দেন পুরো প্রেক্ষাপট। তাতে জ্বলে ওঠে টুর্নামেন্টের আশার আলো। মাঠে ফেরেন দর্শক। আর সমানতালে এগিয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম কিংবা ইমরুল কায়েসরা। অষ্টম আসরে দল না পাওয়া নাসির হোসেন দেখান দারুণ চমক। রনি তালুকদার নজর কাড়েন নতুন করে।

দেশি কোচ হিসেবে অভিজ্ঞতার ছাপ রেখে সিলেট-কুমিল্লাকে ফাইনালে টেনে তোলেন খোন্দকার মোহাম্মদ রাজিন সালেহ ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এই দুই কোচের পরিচালনায় তৌহিদ হৃদয় কিংবা মুকিদুল ইসলামরা জ্বলে ওঠেন স্বমহিমায়। কুমিল্লার তানভীর ইসলাম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির খাতায় নাম লেখান। সর্বোচ্চ রান তোলেন সিলেটের নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও আজম খান, জনসন চার্লস, উসমান খান ও ইফতিখার আহমেদ বাদে দেশি কোনো খেলোয়াড় এবার সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তারপরেও বিদেশি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ভিড়ে বাংলাদেশিদের এমন সাফল্য প্রশংসনীয়।

আরও পড়ুন: শান্ত ও তৌহিদসহ বিপিএলের সেরা একাদশে আছেন যারা

এ দিকে বিপিএল নিয়ে বিদেশিরাও আশার আলো দেখেছেন, দেখিয়েছেন। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেভিড মালান প্রশংসা করেছেন বিপিএলের। এছাড়া টুর্নামেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন তিনি। আর বিপিএলের কল্যাণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে পাকিস্তানি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমির ও শোয়েব মালিকের। বাংলাদেশের এই টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স করে তারা নজর কেড়েছেন পিসিবির। ফেরার আশা জেগেছে পাকিস্তানের জাতীয় দলে।

সবমিলিয়ে সমালোচনার বিপিএল হয়ে উঠেছে রঙিন। দেশি খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন খেলা দেখতে আসা দর্শকেরা। তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দিনশেষে শিরোপা জিতে কুমিল্লার এই কোচ নিজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ রাখলেন আরও একবার। বিসিবিকে পুরোনো বার্তাটিই দিলেন নতুন করে। তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেটের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিদেশ প্রীতি কতটা কমবে, সেটি সময়ের ওপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।

বিপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স

নাজমুল হোসেন শান্ত (সিলেট স্ট্রাইকার্স) – রান: ৫১৬, গড় ৩৯.৬৯, স্ট্রাইকরেট ১১৬.৭৪,

রনি তালুকদার (রংপুর রাইডার্স) – রান: ৪২৫, গড় ৩৫.৪১, স্ট্রাইকরেট ১২৯.১৭;

তৌহিদ হৃদয় (সিলেট স্ট্রাইকার্স) – রান: ৪০৩, গড় ৩৬.৬৩, স্ট্রাইকরেট ১৪০.৪১;

সাকিব আল হাসান (ফরচুন বরিশাল) – রান: ৩৭৫, স্ট্রাইকরেট ১৭৪.৪১, উইকেট ১০; ইকোনমি ৬.৩১

তাসকিন আহমেদ (ঢাকা ডমিনেটর্স) – উইকেট ১০, গড় ২০.৬০, ইকোনমি ৬.০২;

তানভীর ইসলাম (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) -উইকেট ১৭, গড় ১৭.৫৮, ইকোনমি ৬.৩৬;

হাসান মাহমুদ (রংপুর রাইডার্স) – উইকেট ১৭, গড় ২৪.৮২, ইকোনমি ৭.৯৮।

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *