<![CDATA[
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের একমাত্র ভরসার সরকারি এই হাসপাতালটি। তবে মেশিনপত্র অকেজো রেখে অসুস্থ-অসহায় মানুষকে জিম্মি করে এখানে একদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাট ও আরেকদিকে গরিব মানুষের পকেট কাটছে একটি সিন্ডিকেট। সরকারি এই হাসপাতালে ভয়ংকর ফাঁদ পেতে রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক।
সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (রামেকে) অনুসন্ধানে এমন তথ্যই উঠে আছে।
অভিযোগে জানা যায়, হাসপাতালের সাড়ে ৫০০ যন্ত্রপাতির ৪০০টি বিকল। আর ১৪১টি পদে আউট সোর্সিং কর্মী নিয়োগ নানা ছুতোয় ঝুলে আছে গত ৫ বছর ধরে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাদ্যের মান, সরকারি সরবরাহের কোনো ওষুধই না পাওয়া, ওয়ার্ডবয়, সোর্স আর দালালদের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয় মানুষ। হাসপাতালের রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট করে বা নষ্টের কথা বলে একটি সিন্ডিকেট বাইরের হাসপাতাল, ছোট ছোট ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগী ভাগিয়ে নেয়।
অভিযোগে আরও জানা যায়, আড়াই কোটি জনঅধ্যুষিত উত্তরের ৮টি জেলার বিভাগীয় সদর দফতর রংপুরে উন্নত চিকিৎসার সরকারি হাসপাতালটিতে ওষুধ-খাদ্য, রোগনির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর বাক্সবন্দি রাখায় পড়ে থেকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। হাসপাতালে ৫০০ কর্মীকে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার অনুমোদন সরকার অনেক দিন আগেই দিয়ে রাখলেও তা বাস্তবায়ন আর হয়নি এখনও।
আরও পড়ুন: রমেকের ওয়ার্ড মাস্টারসহ ১৬ কর্মচারীকে বদলি
জনবল সংকট কাটাতে নিয়োগেরও ব্যবস্থা করে সরকার। কিন্তু চালু হতে না হতে মেশিনপত্র নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি ৫ বছর ধরে আউট সোর্সিংয়ের ১৪১ কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখার পেছনে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে ভেতর থেকে একটি সিন্ডিকেট সহায়তা করছে বলে অভিযোগ বিশিষ্ট নাগরিকদের।
তথ্য ও গবেষণাকেন্দ্র চিন্তনের প্রধান উপদেষ্টা খন্দকার ফকরুল আনাম বলেন, বাইরে ব্যাঙের ছাড়ার মতো প্রাইভেট ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। রংপুর মেডিকেল কলেজের ভেতর একটি দালালচক্র আছে। তারা অর্থের বিনিময়ে এখান থেকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে রোগী সরবরাহ করছে। ভেতর থেকেই ওই সিন্ডিকেট বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে সহায়তা করছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ২৯
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের নেতা বেলাল হোসেন বলেন, এমনটা নতুন করে নয়, দীর্ঘদিন থেকে চলছে। এখানে যে অসুস্থ মানুষটা আসেন তিনি আরও অসুস্থ হয়ে একদম মৃত্যুর দারস্থ হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যান। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতেই থাকবে।
অভিযোগ আছে, সিন্ডিকেটের আজ্ঞাবহ না হলে এই হাসপাতালে দু-এক মাসও টিকতে পারেননি কোনো পরিচালক।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে চিঠি দেয়া হয়েছে। কোথায় কোন কোন মেশিন অকেজো আছে, কবে কেনা হয়েছিল এবং সেগুলোর গ্যারান্টি পিরিয়ড আছে কিনা এসব বিষয়ে ওই চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে।
]]>