<![CDATA[
একাত্তরের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুক্তরাজ্যে পলাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে বাংলাদেশে হস্তান্তর না করায় প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ। ‘আইএস বধূ’ শামীমা বেগমের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থানের পর এক টুইটে তিনি এই প্রশ্ন তুলেন।
ব্যারিস্টার ফরহাদ টুইটে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের অভিযোগের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা সত্ত্বেও যদি যুক্তরাজ্য সরকারকে শামীমা বেগমকে রাষ্ট্রহীন করা থেকে থামাতে না পারে, তাহলে ফাঁসির দণ্ড কীভাবে যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈন উদ্দিনকে প্রত্যর্পণের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ালো?
এদিকে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণী শামীমা বেগমকে তার মা-বাবার দেশ বাংলাদেশে পাঠালে তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হবেন বলে আদালতের শুনানিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী।
শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার কারণে তিনি এখন ‘রাষ্ট্রহীন’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে শুনানিতে।
যুক্তরাজ্যের স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে (সিয়াক) শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে। শামীমার আইনজীবী ড্যান স্কয়ারস কেসি এসব কথা বলেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমা বেগমের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিলের ‘গুরুতর বাস্তব পরিণতি’ বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ড্যান স্কয়ারস কেসি শুনানিতে বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, শামীমা বেগমকে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রহীন করে দেবে এমন সম্ভাবনা তিনি (সাজিদ জাভিদ) বিবেচনা করেননি।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহীদ’ বলা আদালত অবমাননার শামিল
আদালতে দাখিল করা নথিতে দেখা গেছে, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার আগের দিনই তার রাষ্ট্রহীনতা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
ড্যান স্কয়ারস বলেন, `স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব জানার চেষ্টা করেননি এবং রাষ্ট্রহীন হওয়ার ফলে কি কি হতে পারে সে বিষয়গুলোও বিবেচনা করেননি।’
তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ের মধ্যে ২৩ বছর বয়সি শামীমাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে কি না এবং তিনি কোনও সুরক্ষা পাবেন কি না সে প্রশ্ন রয়েছে।’
আইনজীবী বলেন, `শামীমাকে তার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার বাস্তব প্রভাব সম্পর্কে সাজিদ জাভিদ যদি জানার চেষ্টা করতেন তাহলে বাংলাদেশ সরকার তাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়ে দিত যে, দেশটিতে ঢুকলে শামীমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে।’
আরও পড়ুন: জামায়াতের কেউ যুদ্ধাপরাধী না হলে নিবন্ধন দিতে বাধা নেই: ইসি আলমগীর
শামীমার আইনজীবী বলেন, `এটি স্পষ্ট, সাজিদ জাভিদ আপিলকারীকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার বাস্তব প্রভাব খতিয়ে দেখলে তিনি সম্ভবত বুঝতে পারতেন, আপিলকারী কোনো রাষ্ট্রেরই সুরক্ষা না পেতে পারে।’
অন্যদিকে চৌধুরী মঈনুদ্দীন একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে দণ্ডিত একজন যুদ্ধাপরাধী।
২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে তার অনুপস্থিতিতে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসি দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
]]>