<![CDATA[
লক্ষ্মীপুরে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজকে (২৬) কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ১২ আসামিকেই বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২২ মে) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় ১১ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘হত্যা মামলায় ১৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষী ছিল না। এ ছাড়া মামলার কোনো আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও ছিল না। তাই মামলার বাদী এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১২ জন আসামির বিরুদ্ধে হত্যায় সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে সাড়ে নয় বছর পর এ রায় দিয়েছেন।’
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন: রিয়াজ (৩৫), মোস্তফা কামাল (৫৭), হারুন ওরফে ডাইল হারুন (৪৩), জহির (৩৫), রফিক উল্লা (৪৫), রাকিব হোসেন রাজু ওরফে ইয়াবা রাজু (৪০), মাসুদ (৩৯), সোহেল (৩২), মুসলিম (৩২), মো. তানজিল হায়দার রিয়াজ (৩২), জাহাঙ্গীর (৪৫), নূরে হেলাল মাসুদ (৩৯)। এরা সবাই রায়পুর উপজেলার পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রাম, বামনী, কেরোয়া ও সদর উপজেলার হাসন্দী গ্রামের বাসিন্দা।
রায়ের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, ‘মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
অন্যদিকে মামলার বাদী নিহত ছাত্রলীগ নেতা মিরাজের বাবা আবুল কালাম রায়ের পর তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মামলা ও আদালত সূত্র জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিরাজুল ইসলাম মিরাজ তার বন্ধু মাসুদ ও সোহলকে নিয়ে মোটরসাইকেলে রায়পুর উপজেলার ভূঁইয়ারহাট বাজার থেকে রায়পুর বাজারের দিকে রওনা হন। রায়পুর-মীরগঞ্জ সড়কের বজুভাটের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এলে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী তাদের তিনজনের ওপর হামলা করে। এতে তিনজন আহত হন। আহতদের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ছাত্রলীগ নেতা মিরাজকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন মিরাজের বাবা মাছ ব্যবসায়ী আবুল কালাম রায়পুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ১৪-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুন: আরও ২ আসামি গ্রেফতার
ঘটনার সময় লক্ষ্মীপুরসহ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী ব্যাপক সহিংস আন্দোলন হওয়ায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যা মামলায় আসামি করা হলে পরবর্তী সময়ে তাদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য বাদী ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। এ সময় তিনি একটি সম্পূরক এজাহার দেন। এতে রায়পুরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রাজু, হারুনসহ ১০ আসামির নাম উল্লেখ করেন। এজাহারে ঘটনার সময় মিরাজের সঙ্গে থাকা আহত মাসুদ, সোহেলকেও আসামি করা হয়। পরবর্তী সময়ে আবারও থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে উল্লিখিত বিবাদীদেরও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাদী আদালতে আবেদন করেন।
এদিকে ২০১৫ সালের ৩১মে হত্যা মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেন রায়পুর থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক। তিনি সম্পূরক এজাহারভুক্ত আসামি রাকিব হোসেন রাজু ওরফে ইয়াবা রাজু, জহির ওরফে মাদক জহির ও মুসলিম এই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন এবং ১৮ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।
ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে একই বছরের ৯ জুলাই আদালতে নারাজির আবেদন করেন মামলার বাদী। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৬ সালের ৯ মে লক্ষ্মীপুর সিআইডি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাম্মেল হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে মোট ২২ জন আসামির মধ্যে ১০ জনকে মামলার দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করে ১২ জন আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়।
আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় তাদের বেকসুর খালাস দেন।
]]>