<![CDATA[
ঘড়ির কাটায় বিকেল পৌনে তিনটা। সুনসান পরিবেশ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থী কেউ নেই। কিছু সংখ্যক শিক্ষক কক্ষে বসে আছেন। এদিন বিদ্যালয় এক হাজার ২২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত মাত্র ২৫০ জন।
রোববার (১৩ আগস্ট) সরেজমিন গেলে এচিত্র দেখা যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
শিক্ষকরা বলছেন, সম্প্রতি বিদ্যালয়ে ধূমপানকাণ্ডে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা এবং ওই ছাত্রীর জানাজায় গিয়ে মারধরের শিকার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনাদ্বয়ের পর থেকেই বিদ্যালয়ের উপস্থিতির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ছাত্রী নির্যাতন /‘স্যারেরা আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে’
জানা গেছে, ৭ আগস্ট বিদ্যালয়ের ছাদে উঠে পাঁচ ছাত্রী ধুমপান করে। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষকরা তাদের ডেকে এনে ভিডিও ধারণ করেন এবং অভিভাবকদের জানানো, অনলাইনে ছড়ানো ও টিসি দেয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে অপমানে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া খাতুন (১৪) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর ৮ আগস্ট দুপুরে মরদেহ দেখতে যান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। সেসময় উৎসুক জনতা প্রধান শিক্ষককে মারধর করে আহত করে।
আরও জানা গেছে, এসব ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের তদন্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে রোববার। এছাড়াও থানায় দুইটি মামলা পৃথক মামলা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, দুর্ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী কমে গেছে। স্যারও ক্লাসে আসতে চায় না। তারা বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ চান।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ধূমপানকাণ্ডের পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমেছে। আজ এক হাজার ২২৯ জনের মধ্যে মাত্র ২৫০ জন উপস্থিত ছিল। তাও টিফিনের সময় সবাই চলে গেছে। তার ভাষ্য, আগে টিফিনে শিক্ষকরা বেত নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ঠেকাতেন। কিন্তু এখন ভয়ে শিক্ষকরা নীরব।
আরও পড়ুন: ছাত্রীর মরদেহ নিয়ে গ্রামবাসীর মানববন্ধন, প্রধানশিক্ষককে গণপিটুনি
তিনি আরও বলেন, ঘটনার তদন্তের জন্য প্রধান শিক্ষককে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। রোববার সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অসুস্থ থাকায় তদন্ত শুরুই হয়নি। সময় বাড়ানো হবে।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, প্রশাসনের তদন্ত শেষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন সাবমিট করা হবে। সাবমিটের আগেই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
]]>