Skip to content

১৮ ডলারে শুরু, স্বপ্ন হিমালয় ছোঁয়ার | সময় স্পেশাল

১৮ ডলারে শুরু, স্বপ্ন হিমালয় ছোঁয়ার | সময় স্পেশাল

<![CDATA[

স্বাধীনতার পর মাত্র ১৮ ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের। কে জানতো সেই রিজার্ভ দাঁড়াবে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে? মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর রোল মডেল।

 

বায়ান্ন বছর আগে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে সবার ছিল নানামুখী সংশয়। সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। করোনার পরে রিজার্ভ কিছুটা কমলেও, বিশ্বকে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সংকট সামাল দিতে হয়। 

 

বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

তবে এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ চাপের মধ্যে থাকলেও, বড় কোনো বিপদের মধ্যে নেই।

 

যেভাবে গঠন হয় রিজার্ভ 
২০২১ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রিজার্ভ গড়ে ওঠার গল্প শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ শুরু করেছিল মাত্র ১৮ ডলার দিয়ে। পাকিস্তানিরা চলে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকা অফিসে রেখে গিয়েছিল ওই ১৮ ডলার। ওই সংকটের সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। একইসঙ্গে সাহায্য করেছিল সুইডেন এবং কানাডা।

 

এই দুই দেশ বাংলাশের রিজার্ভ সমৃদ্ধ করতে দিয়েছিল নগদ ডলার। আর টাকা ছাপানোর যোগ্যতার পরিমাপক হিসেবে দিয়েছিল স্বর্ণ।

 

আর বর্তমান অবস্থানে রিজার্ভকে টেনে আনতে রেমিট্যান্স ও পোশাক রফতানিকে ক্রেডিট দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম।

 

আরও পড়ুন: রিজার্ভে স্বস্তি: বাংলাদেশকে নিয়ে ভরসা পাচ্ছে দাতা সংস্থাগুলো

 

বিবিসিকে দেয়া আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘দুটি বিষয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আজকের অবস্থানে আসতে সাহায্য করেছে। একটি হচ্ছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া লাখ লাখ বাংলাদেশি যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের জন্য পাঠিয়েছেন, সেটা অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। আরেকটি হলো তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ এখন চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক। এটাও এক বিরাট সাফল্য। বাংলাদেশে যে একদিন এরকম কিছু ঘটবে, এটা তো আমরা কল্পনাই করতে পারিনি।’

 

উন্নয়নশীল হওয়ার পথে বাংলাদেশ
বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও ২০২৬ সালের মধ্যে সে তকমা থেকেও বেরিয়ে আসছে। জাতিসংঘের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসারে একটি দেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা এর নিচে থাকতে হবে। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা এর বেশি পয়েন্ট থাকতে হবে। আর মাথাপিছু আয় সূচকে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার থাকতে হবে।

 

এক্ষেত্রে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা সিডিপির হিসাব মতে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৮২৭ ডলার, মানবসম্পদ সূচক ৭৫ দশমিক ৩ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ২৭ দশমিক ২ – যা উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সব কটি যোগ্যতা পূরণ করে।

 

বন্ধ করতে হবে টাকা পাচার
বর্তমান সময়ে এসেও বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক রফতানিতে অর্জিত আয়। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবীর বলেন,  বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় দেশের অর্থনীতিকে প্রতিনিয়ত চাঙ্গা করছে। তবে চলমান বৈশ্বিক ডলার সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল অবস্থানে রয়েছে। যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশেও। চলমান এই পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশকে প্রথমেই অর্থপাচার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

আরও পড়ুন: যেভাবে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের রিজার্ভ

 

মাহফুজ বলেন, চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কয়েকটি দিককে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রথমত, অর্থপাচার রোধ করা। অন্যদিকে হুন্ডি বন্ধে ও বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়াতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একক রেট করতে হবে।

 

এছাড়া বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী করার জন্য প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করারও কথা বলেছেন এই অর্থনীতিবিদ।

 

বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার থেকে কীভাবে আরও সহায়তা নেয়া যায় সেদিকেও দৃষ্টি দেয়ার কথা বলেছেন তিনি।

 

পাশাপাশি বিলাসী পণ্য আমদানির ওপর যে বিধিনিষেধ রয়েছে, সেটি অব্যাহত রাখলে আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে ও ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মাহফুজ।

 

বৃহস্পতিবার (১ জুন) ঘোষিত হচ্ছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। এক্ষেত্রে সরকারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এই মূহুর্তে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি সামাল দেয়া। এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মধ্যবিত্তদের আওতাভুক্ত করা, বিলাসী পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহ বজায় রাখা সম্ভব হলে আগামী দিনে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

 

২০৪০ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশ
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশের গতিপথ নিয়ে সম্প্রতি ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশ হিসেবে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে। মূলত অগ্রসরমান নতুন অর্থনীতি, বিশ্ববাজারে ভোক্তা সন্তুষ্টি ও তরুণ জনশক্তি হবে বাংলাদেশের শক্তিশালী হাতিয়ার।

 

বোস্টন কন্সালটিং ফার্মের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের অবস্থান নবম। বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনশক্তির গড় বয়স মাত্র ২৮ বছর। বাংলাদেশের যে যোগ্য জনশক্তি রয়েছে তা দিয়ে দেশটি তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। 

 

আরও পড়ুন: রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা নেই, পর্যাপ্ত মজুত আছে: প্রধানমন্ত্রী

 

নিজেদের অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে পারলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যবিত্তের দেশে পরিণত হবে।

 

অর্থনৈতিক বিকাশের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস। এ পথ ধরে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ পরিণত হবে উচ্চ আয়ের দেশে।

 

সেই ১৮ ডলার নিয়ে যাত্রা করা দেশটি কয়েক দশক পর বিশ্বের বুকে হাতেগোনা উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াবে- এখন সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষা।

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *