<![CDATA[
কর্পোরেট দুনিয়ায় এক পরিচিত মুখ তিনি। এক সময় পেপসিকোর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ছিলেন। যার কথা বলা হচ্ছে, তার নাম ইন্দ্রা নুয়ি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নারী এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সফল ১০০ নারীর একজন।
বর্তমানে ৬৭ বছর বয়সী ইন্দ্রা নুয়ি ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটানা ২৪ বছর পেপসিকো কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন। এর মধ্যে পরবর্তী ১২ বছর ধরে ছিলেন প্রধান নির্বাহী (সিইও)। এ সময় বছরে ৩১ মিলিয়ন ডলার (যা ২০০ কোটি রুপির সমান) বেতন পাচ্ছিলেন তিনি। এত পাওয়া সত্ত্বেও পেপসিকোর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।
ইন্দ্রা নুয়ি’র জন্ম ও শিক্ষা
পুরো নাম ইন্দ্রা কৃষ্ণমুর্থী নুয়ি। ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিল নাড়ুর চেন্নাইয়ে (সেই সময় মাদ্রাজ) জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা, দাদা-দাদি ও আরও দুই ভাই-বোনের সঙ্গে এক বিস্তৃত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। মা গৃহিনী আর বাবা ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা।
ছোটবেলা থেকেই অত্যান্ত মেধাবী ইন্দ্রা ১৯৭৪ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর উচ্চতর পড়াশুনার জন্য ১৯৭৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং ইয়েল স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে পাবলিক অ্যান্ড প্রাইভেট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টারস ডিগ্রি নেন।
পেশাগত জীবনে ইন্দ্রা নুয়ি’র ঈর্ষণীয় সাফল্য
ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট থেকে ১৯৮০ সালে মাস্টারস ডিগ্রি সম্পন্ন করার পরই ইন্দ্রা মার্কিন ঠিকাদার কোম্পানি বুজ অ্যালেন হ্যামিল্টনে ইন্টার্নশিপ করেন। ইন্টার্নশিপ শেষে যুক্তরাষ্ট্রেই তার পেশাজীবন শুরু হয়। ১৯৮০ সালেই মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ-এ পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন তিনি।
এরপর ইন্দ্রা মার্কিন বহুজাতিক টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি মটোরোলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কের্পোরেট স্ট্রাটেজি অ্যান্ড প্লানিং বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খাদ্য ও পানীয় কোম্পানি পেপসিকোয় যোগ দেন।
এখানে যোগ দেয়ার পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। যোগদানের ১২ বছরের মাথায় ২০০৬ সালে তাকে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (সিইও) করা হয়। এর মধ্যদিয়ে পেপসিকোর ৪৪ বছরের ইতিহাসে পঞ্চম প্রধান নির্বাহী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এরপর ২০০৭ সালে চেয়ারপার্সনের দায়িত্বও পান।
এরপর আরও ১২ বছর দায়িত্ব সামলানোর পর ২০১৮ সালে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। ওই সময় তার বার্ষিক বেতন ছিল ২০০ কোটি রুপি। সবমিলিয়ে ২৪ বছর ধরে বিভিন্ন দায়িত্ব সামলানোর পর ২০১৯ সালে পোপসিকো ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেন।
ইন্দ্রা নুয়ি’র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে এবং তিনি কানেক্টিকাট রাজ্যের গ্রিনউইচে দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। এখানে ১৯৯২ সালে ওষুধ কোম্পানি পার্দু ফার্মার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান রিচার্ড স্যাকলারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কেনেন তিনি।
ইন্দ্রা নুয়ি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চাকরি জীবনে কোম্পানির কাছে কখনও বেতন বাড়ানোর কথা বলেননি তিনি। এমনকি ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক মন্দার সময় বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
বর্তমানে ইন্দ্রা নুয়ি’র সম্পদ
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নারীকে গত মাসে আমেরিকার সবচেয়ে সফল ১০০ জন নারীর তালিকায় জায়গা দিয়েছে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বেস। সেই তালিকায় ইন্দ্রার অবস্থান ৭৭তম।
ফোর্বেসের হিসাব মতে, বর্তমানে ইন্দ্রার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ভারতীয় মুদ্রায় ২ হাজার ৮৯০ কোটি রুপির সমান। যার বেশিরভাগ পেপসিকোতে কাজ করার সময় প্রাপ্ত শেয়ার থেকে এসেছে।
পেশাজীবনের পুরোটা সময় কর্পোরেট দুনিয়ার বিভিন্ন দায়িত্ব সামলালেও ইন্দ্রার পরিচিতি কখনও শুধু কর্পোরেট বৃত্তে আটকে থাকেনি। বরং পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের বোর্ডের সদস্য তিনি। ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল ও ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের মতো বৈশ্বিক নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন।
সূত্র: ডিএনএ ইন্ডিয়া, জিও নিউজ
]]>