Skip to content

গানবাজনা করলে জানাজা না পড়ানোর ঘোষণা তদন্ত করছে প্রশাসন

  • by
গানবাজনা করলে জানাজা না পড়ানোর ঘোষণা তদন্ত করছে প্রশাসন

নারায়ণগঞ্জে কেউ গানবাজনা করলে তাঁদের জানাজা ও বিয়ে পড়ানো হবে না বলে মাইকিংয়ের ঘটনা তদন্ত করছে বন্দর উপজেলা প্রশাসন। 

“রোববার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে,” সোমবার বেনারকে জানান বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার। 

তদন্তের পর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। 

গানবাজনা করা বা শোনার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে উল্লেখ করে শুক্লা সরকার বলেন, “কেউ যদি ধর্মীয় বা অন্য কোনো কারণে গানবাজনা করতে না চান, সেই অধিকারও তাঁদের রয়েছে। কিন্তু অন্যের অধিকারে বাধা দেওয়া যাবে না। জবরদস্তি কিছু ঘটলে অবশ্যই আমরা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেব।” 

গত ১ জানুয়ারি শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ বন্দর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কলাবাগ এলাকায় বিয়ে, সুন্নতে খৎনা, গায়ে হলুদের মতো অনুষ্ঠানে গানবাজনার আয়োজন করা যাবে না বলে মাইকিং করে নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

ইসলাম ধর্মাবলম্বী কোনো পরিবার এ নির্দেশনা অমান্য করলে তাঁদের বিয়ে পড়াতে বা দোয়ায় কোনো আলেম অংশগ্রহণ করবেন না; এমনকি ওই পরিবারের কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর জানাজাও পড়াতে মসজিদের ইমাম বা অন্য কেউ অংশগ্রহণ করবেন না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।

স্থানীয় পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির লোকজন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ওই এলাকার কাউন্সিলর সাব্বির আহম্মেদ ইমন। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁরই নির্দেশে মাইকিং হয়েছে বলে তিনি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে গানবাজনায় বিধিনিষেধ আরোপ সংবিধান পরিপন্থী। 

রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষক ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মাহমুদ বেনারকে বলেন, “এ ধরনের ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী এবং মানুষের সাংস্কৃতিক অধিকারের বিরুদ্ধে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের নামান্তর।”

“রাজনীতিতে মৌলবাদ লালন করার ফলে দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারই ফলশ্রুতিতে এ রকম ঘটনা ঘটছে। সরকার যখন বাউল-বয়াতিদের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার করে জেল খাটায়, তখন সমাজে এ রকম অন্যায় উৎপীড়ন বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক,” বলেন তিনি। 

“গান গাওয়ার সাজা হিসেবে কারো জানাজা পড়া হবে না- এরকম কথা আগে ভাবা যেত না,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী।

“উকিল মুন্সী দেশের একজন খ্যাতিমান মানুষ, যিনি একটি মসজিদের ইমাম হওয়া সত্ত্বেও সঙ্গীত ও নাট্যকলার চর্চা করতেন। তারও জানাজা হয়েছে,” বলেন তিনি। 

‘হুমকিতে গান ছাড়েননি শরিয়ত বয়াতি’

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া বয়াতি শরিয়ত সরকার প্রায় চার মাস আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন বলে সোমবার বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী শিরিন আখতার।

“দেশে এখন গানবাজনা করা কঠিন হয়ে গেছে। আমার স্বামী গানের মাধ্যমে ধর্মের কথাই প্রচার করেন। অথচ তাঁকেও জেলে নিয়ে গিয়েছিল,” বলেন শিরিন।

উচ্চ আদালত থেকে শরিয়ত সরকার জামিন পেয়েছেন উল্লেখ করে শিরিন বলেন, “একটা বছর অনেক ঝামেলার মধ্যে ছিলাম। এখন কথা বলতেই ভয় লাগে। মোল্লারা এখনো মাঝে মাঝে আমার স্বামীকে বলে, গান বাজনা বাদ দিতে হবে।”

“তবে কোনো হুমকিতেই শরিয়ত সরকার গান ছাড়েননি,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উপার্জন নেই। করোনাভাইরাসের কারণে এখন বয়াতিদের গানের আসর তেমন একটা হয় না। বের হওয়ার পর দু-একবার গানের আসর করেছে।” 

এছাড়া গানের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে আরেক বাউল শিল্পী রীতা দেওয়ানের নামেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে।

সৌজন্যে: বেনার নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *