Skip to content

কেন একের পর এক নিখোঁজ হচ্ছেন চীনা ধনকুবেররা | সময় স্পেশাল

কেন একের পর এক নিখোঁজ হচ্ছেন চীনা ধনকুবেররা | সময় স্পেশাল

<![CDATA[

একের পর এক নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন চীনের ধনকুবেররা। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন বাও ফ্যান, যিনি দেশটির প্রযুক্তি বাজারে অন্যতম শীর্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে খ্যাত। কেবল ফ্যানই নন, এ তালিকায় রয়েছেন আলীবাবা ও বাইডুর মতো প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তারা একের পর এক নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন!

বাও ফ্যানের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার সঙ্গে আগে অন্য ধনকুবেরদের নিখোঁজ হওয়ার ধরনের মিল আছে। যেমন- বাওয়ের প্রতিষ্ঠান চায়না রেনেসাঁ হোল্ডিংস কিছুদিন আগে ঘোষণা দেয়, তারা চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করছে। এ ঘোষণার পরপরই বাও নিখোঁজ হয়ে যান। দুঃখের বিষয় হলো, বাও কোথায় আছেন বা চীন সরকারের কোন সংস্থা তদন্ত চালাচ্ছে, সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।

বাওয়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে চীনের অর্থনীতির ওপর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিয়ন্ত্রণ সংহতকরণের উপায় হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। এ ধারণা আরও পোক্ত হয়, যখন চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) চীনের অর্থ ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা পেশ করে। পরিকল্পনা অনুসারে, আর্থিক খাতে তদারকির জন্য নতুন আর্থিক নিয়ন্ত্রক ও নজরদারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। এর কাজ হবে ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের চীনা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ফাঁক-ফোকর খুঁজে বের করা।
 

আরও পড়ুন: জাপানে লুকিয়ে ছিলেন চীনা ধনকুবের জ্যাক মা: প্রতিবেদন

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করে নিখোঁজ হন চীনা কনগ্লোমারেট ফুসন ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান গুয়ো গুয়াংচং। তার প্রতিষ্ঠান ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের মালিকানার জন্য বিখ্যাত। বেশ কয়েক মাস পর তার প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দেয় যে, তিনি ফিরে এসেছেন এবং সরকারি তদন্তে সহযোগিতা করছেন। এরপর ২০১৭ সালে নিখোঁজ হন চীনা বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জিয়াও জিয়ানহুয়া। তাকে হংকংয়ের একটি হোটেল থেকে উঠিয়ে নেয় কেউ। এর প্রায় ৩ বছর পর ২০২২ সালে তাকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেয় চীনা আদালত। ২০২০ সালের মার্চে নিখোঁজ হয়ে যান চীনের রিয়েল এস্টেট খাতের রাঘব-বোয়াল রেন ঝিকিয়াং। নিখোঁজ হওয়ার আগে রেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘ভাঁড়’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। পরের বছর রেনকে দুর্নীতির অভিযোগে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। 

নিখোঁজ হওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল ছিলেন আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। ২০২০ সালে চীনের আর্থিক নীতির সমালোচনা করার পরপরই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। তার মালিকানাধীন আর্থিক-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা হয়। এমনকি দেশটির ‘সাধারণ সমৃদ্ধি’ তহবিলে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার দান করার পরও তাকে দুই বছরের বেশি সময় জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই। তারপরও তিনি দুই বছর নিখোঁজ ছিলেন। জ্যাক মা এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। খবর এসেছে তাকে জাপান, থাইল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় দেখা গেছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে।

চীন সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা কাউকে গুম বা নিখোঁজ করেনি। তবে তারা শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চালাচ্ছে। সরকার বলেছে, দেশের ধনী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপগুলো মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রয়োগ। তবে বেইজিংয়ের এমন পদক্ষেপ দেশটির অর্থনৈতিক উদারীকরণের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: কেন নিজের প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ছাড়তে বাধ্য হলেন জ্যাক মা?

কেবল তাই নয়, বিশ্লেষকদের ধারণা, চীনা অনেক ধনকুবের তাদের বিপুল সম্পদের কারণে ক্ষমতাসীনদের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছিলেন। চীনের ক্ষমতাসীন কমিনিউস্ট পার্টি তা হতে দিতে চায় না এবং তা করতে গিয়েই দলটি এমন সব কর্মকাণ্ড করছে, যা প্রায়ই রহস্যের মেঘে ঢাকা থাকে।

চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন এবং হু জিনতাওয়ের আমলে দেশটির প্রযুক্তি খাত যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে। তার আগে চীনের ক্ষমতার উৎস ছিল ভারী শিল্পখাত, সামরিক শিল্প এবং স্থানীয় সরকার। ক্ষমতা সংহত করতে গিয়ে শি জিনপিং এসব প্রতিষ্ঠান তো বটেই এখন প্রযুক্তি খাতেও নিজের নিয়ন্ত্রণের থাবা বসানোর চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর শি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পাচ্ছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। 

এ বিষয়ে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের নিক ম্যারো বিবিসিকে বলেছেন, ‘কখনো কখনো এমন কাজ (নিখোঁজ) করা হয় নির্দিষ্ট একটি খাত বা ইন্টারেস্ট গ্রুপের কাছে একটি নির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছানোর জন্য। দিন শেষে এ ধরনের কাজের মানে হলো, অর্থনীতির একটি নির্দিষ্ট অংশের ওপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। যা বিগত কয়েক দশক ধরে শি জিনপিংয়ের শাসনের বৈশিষ্ট্য ছিল।’ 

এ বিষয়ে বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অলব্রাইট স্টোনব্রিজের চীন বিষয়ক গবেষক পল ট্রিলো বলেছেন, ‘বেইজিংয়ের মনোভাব হলো, যেন বড় কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং তাদের প্রতিষ্ঠাতারা নিজ নিজ ইমেজ তৈরি করতে না পারেন এবং তারা যেনে কোনোভাবেই শাসনক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ না করে।’

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার বিরোধী, শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী চীন: শি জিনপিং

চীনের বর্তমান সরকার প্রবর্তিত ‘সাধারণ সমৃদ্ধি’ নীতির মূল কথা হলো আইনের শাসন এবং তা ধনী-গরিব সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। চীন এ নীতি জোর দিয়ে মেনে চলছে, যাতে ধনী এবং গরিবের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান কমিয়ে আনা যায়। দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটির কট্টর বামপন্থিদের কাছ থেকে তীব্র চাপের মুখেও রয়েছেন। ফলে তার জন্য প্রযুক্তি জায়ান্টদের নিয়ন্ত্রণে আনা ছাড়া অন্য রাস্তাও সেভাবে খোলা নেই। 

ধনকুবেরদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টির নেতিবাচক ফলাফলও রয়েছে। চীনা বেশ কয়েকজন বিশ্লেষকই বলছেন, সরকার এমন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রযুক্তি খাতে মেধার বিকাশকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এ বিষয়ে পল ট্রিলো বলেছেন, ‘ধনকুবেরদের টার্গেট করার মাধ্যমে বেইজিং দেশটির প্রযুক্তি খাতে পরবর্তী জ্যাক মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে তরুণ প্রজন্মকে হতাশ করে তুলছে।’

তবে শি জিনপিংকে এ ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন বলেই মনে হচ্ছে। এনপিসি প্রতিনিধিদের কাছে এক বক্তৃতায় তিনি চীনের উন্নতির জন্য বেসরকারি খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের ধনী হওয়ার পাশাপাশি ‘দায়িত্বশীল, ন্যায়পরায়ণ এবং প্রেমময়’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর বাইরে সেই ভাষণে শি জিনপিং দেশটির ব্যাংকারদের সতর্ক করেছিলেন ‘পশ্চিমা ভোগবাদী ব্যাংকারদের’ অনুসরণ না করতে।

আরও পড়ুন: ক্ষোভে ফুঁসছে চীন, চ্যালেঞ্জের মুখে শি জিনপিং

শির এই ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লষকরা বলছেন, চীন খুব শক্তভাবেই ব্যবসায়কে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এ বিষয়ে নিক ম্যারো বলছেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনের সাধারণ উন্নতি প্রকল্পের কারণে আমরা দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেছি।’

এখন দেখার বিষয় হলো, ধনকুবেরদের প্রতি শি জিনপিং সরকারের চলমান মনোভাব তাদের ক্ষমতাকে আরও সংহত করবে কি-না। সেটি করুক বা না করুক,  বিশ্লষকদের মনোভাব এমন যে, চীনের বাজার, ব্যবসায় এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে — তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 

(বিবিসি থেকে অনূদিত)

]]>

সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *